Monday, 7 October 2013

বাবুদের সাধারণ সর্দি-কাশি




২০১১, অক্টোবর। আমার জীবনের নতুন মোড়ক উন্মোচন! ছোটকালে যখন মা-বাবার বিয়ের ছবি  দেখতাম তখন অন্য বাচ্চাদের মতন আমিও অভিমান করে বলতাম- ‘আমাকে নাও নাই কেন তোমাদের বিয়েতে’? দিন বদলায়!
আজ আমার কোল জুড়ে আমার শৈশব খেলা করে!! কিন্তু আমার মতন হয়নি মোটেওবাবার প্রতিলিপি বা অনুকরণ বিড়াল (কপি ক্যাট)গুগল ট্রান্সলেট্রের কাজটা আমাকেই দেয়া উচিত ছিল। যাই হোক। ছোট্ট এতটুকুন জুনায়রার বয়স এখন ২ বছর ছুঁই ছুঁই। তাই বলে কিন্তু তাকে ছোট মানুষ- কিচ্ছু বোঝেনাবললে ভূল হবে। আমার শশুরি মা’-এর ভাষ্যমতে,-‘’এইটা হইল অনেক আগের যুগের আত্মামানে আগের দিনের মানুষের মত জ্ঞানী! বলে রাখা ভাল,  তিনি তার পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারে খুবই গুণগত মান বিচারী এবং তার কথার অন্যথা পছন্দ করেন না। এর মানে এই নয় যে তিনি অধিক আদরে বিগড়ে যাওয়া, জিদ্দি বাচ্চা। তবে এ কথা সত্য এই ২২ মাসের মিস. জুনায়নার ভয়ে আমাদের দুই বাড়ির (মানে আমার মায়ের বাড়ি ও শশুর বাড়ি) বাঘ ও মহিষ এক ঘাটে পানি খায়।
 
মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ওর অস্তিত্ব যেদিন থেকে টের পেয়েছি সেদিন থেকেই আমি পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ উপহারটি নিয়ে প্রচুর পড়েছি এবং পড়ছি। (আগেই বলে রাখি, আমি সাইন্সের ছাত্রী নই)। এগুলো আমাকে বিভিন্ন সময় অনেক সাহায্য করেছে। প্রচলিত অনেক প্রথা আমাদের অনেক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। বিশেষ করে নতুন যারা মা হয়েছেন তাদের জন্য। জানছেন ভূল হচ্ছে তবুও কিছু করতে পারছেন না কারণ হয়তবা ইতোমধ্যি শুনে ফেলেছেন- তাই বলে কি মা-খালারা বাচ্চা মানুষ করেনি?!’  অথবাআমাদের বাচ্চারা কি মরে গেছে?’
 

নাহ! তাদের প্রতি কটু কথা বলতে আমার অবস্থান নয়। নতুন শিশুটি যেমন আপনার কলিজার টুকরা, তেমনি তাদেরও অনেক অনেক আদরের। তাদের সাথে নিয়েই তাদের বোঝাতে অথবা কিছুটা বোঝা টানতে হবে কথার, তবে নিরাশ হবেন না। আজকাল সকলের হাতের কাছেই মডেম রয়েছে। একটু খুজুন, আপনি আপনার শিশুটিকে নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বস্ত সাইটগুলো থেকে পরামর্শ পাবেন। খুব বেশি অস্বস্তিতে ভুগলে আপনার হাতের কাছে থাকা বাবুর ডাক্তারকেই ফোন করুনা, অথবা বাবুর বাবাকে নিয়েই চলে যান তার কাছে। তবে হাতের কাছে যখন মডেমটা আছে তখন আর চিন্তা কি?! পড়ুন। এর বিকল্প হতেই পারেনা।
আগেই বলেছি আমি সাইন্সের ছাত্রী নই, বরাবর মানবিক বিভাগের ছাত্রী। তবে নিজে যেসব সুবিধাগুলো পেয়েছি বাবুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে; সেগুলোতে জানাতে চাই; যদি কারো কিছুটা উপকার হয়, তবেই আমার সার্থকতা। 


আজ বলব সাধারণ সর্দি-কাশি-এর কথাঃ

অনেক বাবা-মাই বাবুর সর্দি কাশি হলে সরাসরি চলে যান ফার্মসীতে। এমেরিকান একাডেমি অফ পেডেয়াট্রিক্স এক্ষেত্রে২ বছরের নিচের শিশুদের এরূপ ঔষধ সেবনের ওপর না-খুশ! কেননা এরূপ ঔষধ সেবন দু’বছর বয়সী শিশুদের জন্য অকার্যকর এবং ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে।
 

এক্ষেত্রে আপনার শিশুর জন্য আপনি এমন কিছু করতে পারেন যাতে সে কিছুটা ভালো অনুভব করে-

১. ঘুমঃ
 
বাবুকে ঘুমোতে দিন। ও যত ঘুমোবে ততই কিন্তু ওর শরীর নিজেকে সারিয়ে তুলবে। ঘুমোক! ভাবছেন ওর খাবার সময় পার হয়ে যাচ্ছে! বলে রাখি, আপনি যতই উপোষ দিন না কেন; বাবু কিন্তু তা করবে না, ওর খাবার সময় হলে কিন্তু ও নিজেই জানান দিবে। বাবু নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করলে ওর বালিশটা একটু উচু করে দিন। আরাম পাবে।

২. বিশ্রামঃ
শুয়ে শুয়ে ওর প্রিয় কার্টুন টা দেখতে দেখতে কিন্তু ওর বিশ্রাম হতে পারে। কিংবা ওকে গল্প বা হাট্টি মাটিম টিম শোনাতে শোনাতেও ওর বিশ্রাম নিশ্চিত করতে পারেন আপনি নিজেই। বাচ্চারা রঙ্গীন ছবি পছন্দ করে; পুরোনো কিছু ম্যাগাজিনের পাতা উল্টোন না ওকে নিয়েই। ওর শুধু প্রয়োজন একটু আরামদায়ক গা এলাবার যায়গা। আপনার কোলের উষ্ণতা ছাড়া ভালো আর কি-ই বা হতে পারে!


৩. উষ্ণ ভাপঃ
 উষ্ণ পানির ভাপ নাক বন্ধ ভাব খুলতে সহায়তা করে। অত্তো ছোট বাবুর পক্ষে বড়দের মত পানির পাত্র থেকে গরম ভাপ নেওয়া সম্ভব নয়। বাজারে খুব কম দামেই পাওয়া যায় হিঊমিডিফায়ার।
সেদিনকে গুলশানে হোমটেক্স-এও দেখেছিলাম। কিনে নিতে পারেন। নির্দেশিকা অনুযায়ী ঘরে বাষ্প তৈরী করতে পারেন যখন আম্মুসোনা বা আব্বুটা ঘুমিয়ে আছে বা আপন মনে খেলছে।


 তা না হলে, ওয়াশ রুমে গরম পানির পাত্র রেখে/ নলে গরম পানির ব্যবস্থা (গিজার) থাকলে সেটা ছেড়ে দিয়ে একটু বাষ্প তৈরী করে নিন নাহয়। দুজন মিলে থাকুন ১০-১৫ মিনিট। সাথে কিছু পানিতে ভাসা খেলনা নিয়ে নিন। সময় ভালো কাটবে।
বাবুর বয়স ২ বছরের বেশি হলে ওর গোসলের পানিতে মিশিয়ে দিতে পারেন কয়েক ফোটা মেনথল, হাতের কাছে ফার্মেসীতেই পাবেন।

৪. স্যালাইন ওয়াটারঃ
এটি খুবই কার্যকরী একটা জিনিস যা আমি জুনায়রার ক্ষেত্রে ব্যবহার করি/ করেছি। বাজারে শিশুদের জন্য এরকম স্যালাইন পাওয়া যায়। আমি নরসল ড্রপ ব্যবহার করেছি। নিজেও বাড়িতে বসে তৈরী করে নিতে পারেন সহজেই। এর জন্য প্রয়োজন- আধা চা চামচ লবণ ও ৮ আউন্স পানি। এটি কেবল মাত্র ১ দিন ব্যবহারের জন্য, ২৪ ঘন্টা অতিক্রম করলে এতে ব্যকটেরীয়ার সংক্রমণ হয়। তাই সাবধান। এটা ড্রপারের সাহায্যে ১ ফোটা করে প্রতি নাকে দিতে পারেন যখন নাক বন্ধ ভাব দেখবেন। 

৫. বাল্ব সিরিঞ্জঃ
 ছোট বাবুরা নাক ঝারা যাকে বলি- সেটা করতে পারেনা বিধায় নাকে শ্লেষা থেকে যায় ও অস্বস্তিতে ভোগে। বাল্ব সিরিঞ্জ দিয়ে সহজেই টেনে আনতে পারেন শ্লেষা। এটি একটি পাম্প এর মতন, নিচের দিকটাতে রয়েছে সরু নল। নলটি নাকের ছিদ্রের কিছু দূরে প্রবেশ করতে হবে পাম্প চেপে রেখেইএর পর আস্তে আস্তে পাম্প ছাড়তে থাকলে নাকে জলে থাকা শ্লেষা বেরিয়ে আসবে নলে। তবে জুনায়রার মত অস্থির বাচ্চার ক্ষেত্রে একটু ঝামেলাদায়ক। এক্ষেত্রে দুষ্টুটা ঘুমোলে কাজটা করতে পারেন। 



৬. ভ্যাপর রাবঃ
 
বিদেশে শিশুদের জন্য ভিক্সের মত ভ্যপর রাব বাজারে পাওয়া যায়। আমরা সাধারণত যেটি ব্যবহার করি সেটি একদম ছোট বাচ্চাদের জন্য সেটা উপযোগী নয়। জুনায়রার যখন ১৫ দিন তখন একবার ঠান্ডা লেগে হুলুস্থুল! তখন একটা কাপরে কিছুটা ভিক্স মাখিয়ে ওর নাকের নিছু নিরাপদ দূরত্বে ধরে রেখেছিলাম, ওর বিপেও হাল্কা মাখিয়ে রেখেছিলাম। উপকার পেয়েছি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ওটা অর ত্বকে বা চোখে যেন না যায়। 
ছোট বাচ্চাদের জন্য আলাদা এই ভ্যাপর রাব  আমাদের এখানে মনে হয় পাওয়া যায়না। লাজ ফার্মাতেও খুজেছি, পাইনি। সরাসরি এটা ঠান্ডার ওপর কার্যকরী না হলেও আরামদায়ক।

৭. পানি ও তরল খাবারঃ
 
এটা আসলে নতুন করে কিছু বলার নয়। পানি, জুস, দুধের পাশাপাশি ওকে মুরগীর স্টু করে দিন। খুব উপকারী। জুস অবশ্যই বাড়িতে তৈরী- বোতলজাত মিষ্টি কুমড়া নয়। ছয় মাসের কম বয়সী বাবুদের বুকের দুধ/ ফর্মূলাই যথেষ্ট। ১০ মাসের বেশি বয়সী বাবুদের কুসুম গরম পানিতে অল্প মধু ও লেবুর রস দিয়ে খায়াতে পারেন। আরাম পাবে। উল্লেখ্য, ১ম জন্মদিনের আগে বাবুকে মধু দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদিও বাবুর জন্মের পরপর ওর মুখে মধু দেবার প্রচলণ এদেশে বহু পুরোনো। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় দেখা দেছে এটি ওদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৮. সরিষার তেলঃ 
৩ মাসের কম বয়সী বাবুর গায়ে এটি ব্যবহার না করা ভাল। যদিও এটা আমাদের প্রচলিত প্রথার মত। আমার অবস্থান এর কড়া বিরোধে। ঠান্ডা লাগা বাবুর মাথায় তেল দেয়া থেকে বিরত থাকুন, ওর ঠান্ডা কিন্তু আরো বেগতিক হবে। 


আজ এপর্যন্তই। নিজের সন্তানের জন্য যা করছি তা যদি পাঠক বাবা-মা’র কিছুটা হলেও উপকারী মনে হয় তবেই আনন্দ। কারণ আমার বাচ্চাটা আমার জীবনে যেই পরিবর্তন এনেছে তার একটি হল--- ও আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভালোবাসার সংজ্ঞায় যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা
ভালো থাকবেন সবাই। 

No comments:

Post a Comment