Sunday, 6 October 2013

দূরন্ত দুই


দু-বছরের বাচ্চাদের বলা হয় ‘টেরিব্যাল টোওস’ -জানেনই তো। এই দূরন্তপানার সময়টা পার করছি আমি। আর বাচ্চার মায়েদের মত এখন আমি নিজেই বলি- ‘আমার কন্যা যে এত্ত দুষ্টু’! জীবনটা একেক সময় একেকটা রূপ নিয়ে হাজির হয় তাইনা! কখনো আবার নিজের ফেলে আসা দিনগুলোকেই যেন চোখের সামনে মেলে ধরে। আমার কন্যার বাবা গেল শুক্রবার বুঝেছেন কেন আমার শ্রদ্ধেয় শাশুরী মা তাকে নিয়ে আর হাট-বাজারে বা বিপনীগুলো যাবার সাহস করতেননা। ইদানিং আমিও পৃথিবীর বহুল মায়েদের ব্যবহৃত ডায়ালগের সাথে গলা মেলাতে নিজেকে খুঁজে পাই- ‘আমার বাচ্চাটা খুব জেদি। কথা বললে কথাই শোনে না’!

কিছু সময় সত্যিই টেম্পার কন্ট্রোল করা কষ্টকর। কিন্তু তাই বলে চটাস করে অতটুকুন গালে চড় বসিয়ে দেয়া বা বকুনি দেয়া আপনার বজ্র শাসন, অনুশাসন, ডিসিপ্লিনড লাইফকে কোন ভাবেই সম্মানিত করবেনা।  বরং সেটা আপনার শাসনের দূর্বলতাকেই ঠিকরে তুলবে। সেই সাথে সন্তানের কোমল হৃদয় ও মননে আপনার প্রতি সম্মানের চেয়ে ভয়কেই অধিক আশকারা দেবে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কর্মজীবি মাইয়েরাই এই ভোগান্তিতে বেশি ভুগে থাকেন। চাকরী ছেড়ে বসে থাকার জোঁ নেই বলে কলাপ চাপড়ান অথবা বাবুর গাল থাপরান।  অথবা শোনা কথায় কান দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেন – “কর্মজীবী মা-বাবার বাচ্চারা একটু বেশিই জিদ্দি হয়। ইনফিরিয়র কমপ্লেক্সে ভোগে তো।“
ব্যস- আবার সেই মন খারাপের ঘন কালো মেঘের ভেলা; অথবা সেই ‘সময়’ নামক পাগলা ঘোরা খুঁজবার দুধভাত খেলা।

পরিবার যেমনই হোক, বাচ্চাটাই তো মোস্ট ইম্পোর্ট্যান্ট। পরিবারের সবকিছু এখন ওর ভালো কে ঘিরেই। তাই টেনশনে দাতঁ দিয়ে নখ না কেঁটে, ডেইলি লাইফে দাগ কাঁটুন রুটিনের।

·         ভয় নয়, ওকে বুঝিতে দিনঃ
বাবু খেতে চায় না তাই আজগুবি সব ‘নাম’ বা গল্প বানিয়ে ভয় দেখিয়ে খাওয়ানো একটা কালচারের মতন প্রায়। ওখানে যেও না, বাবা বকবে। ওটা ধরো না- তেলাপোকা কামড় দেবে। এরকম ছোট ছোট ‘সেফ লাই’ আমরা প্রায়ই করে থাকি। ফলেন্তু বাচ্চা ভয়ে খাওয়া দাওয়া করে কিংবা আপনি যা চাচ্ছেন না তা থেকে সাময়িকভাবে  বিরত থাকে। ব্যস আপনি খুশি।
ঐ যে বললাম ‘সাময়িক খুশি’- কিছুক্ষন পর দেখবেন বাবু আবার ঐ কাজটিই করছে। অর্থাৎ সে যখন আভাস পেয়েই যায় যে ওটা বলার জন্য বলা তখন সে কাজটি আবারো করে। অন্যদিকে, এটাও সত্য যে আপনার সিমপ্ল ও সেফ লাইগুলো ওর বেড়ে ওঠায়, ওর মনণে হার্ডল ক্রিয়েট করে। ও হীনমন্যতায় ভোগে, সব কিছুতেই ভয় পেতে শেখে।  
তাই, বাবুকে ভয় দেখিয়ে নয়- বরং ওকে বুঝিয়ে বলুন অথবা আদর দিয়ে বলুন ‘কাজটা কেন করতে হবে’, ‘কেন খেতে হবে’, ‘কেন ওটা ধরা ঠিক নয়’। এটাও সত্য এত ছোট বাবু এত সহজেই ধৈর্য দিয়ে আপনার কথা শুনবে না; তাই বলে আপনার ধৈর্য হারা হলেও চলবে না।

·         জানতে দিনঃ
ওকে ফলাফল জানতে দিন। না খেয়ে থাকলে ক্ষুধায় কষ্ট পেতে হয় যেমন জানা জরুরী তেমনি জরুরী জানা- যে খেলাটা কিভাবে খেললে সে ব্যথা পাবে। বাবু তখন নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শিখবে। তাই বলে ফলাফল জানতে তাকে একলা ছেড়ে দিলে চলবেনা। সাথে থাকুন।
মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি, যে বাচ্চাগুলো বেশি চঞ্চল তাদের চঞ্চলতার অন্যতল কারণ হল- ইনসিকিউরিটি। কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পারেনা। আবার কিছু হবার পর আরো বেশি ঘাবড়ে যায় অথবা অতি উৎসাহী হয়ে যায়। তাই হ্যান্ডেল করতে হবে কৌশলে।

·         এনকারেজ করুনঃ
চিন্তা করুন তো- আপনি খুব মজার একটা ডেজার্ট বানালেন। সবাই খেয়ে দেয়ে আপনাকে কোন কমপ্লিমেন্ট না দিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। কেমন লাগবে আপনার?
আমি হলে বলতাম- এই শেষ! জীবন গেলেও আর ডেজার্ট বানাব না।
অর্থাৎ আমরা সবাই চাই কেউ আমাদের কদর করুক। শিশুরাও তাই। ওরা হামাগুড়ি দেয়া শিখুক কিংবা আকাঁবাকাঁ করে এবস্ট্রাক্ট আর্ট-ই হোক- ওকে প্রেইজ করুন। দেখবেন- ও ঠিকই আরেকটু কদর পাবার লোভে নিজেই ভালো কাজগুলোর দিকে ঝুকেঁ পড়বে।

·         মাথা ঠান্ডা রাখুনঃ
ভার্বাল রিসোনিং শিশুদের ক্ষেত্রে কাজ দেয় না। তাই বকুনি দিয়ে লাভ নেই। ওরা মাথা গরম করা কথাগুলো মনে রাখেনা। রাখলেও শিক্ষা হিসেবে নেয় না। বরং মনে করে বকুনি যে দিচ্ছে সে শুধু শুধু রাগ করছে। বকুনি না দিয়ে বরং বার বার মনে করিয়ে দিন- লক্ষী হয়ে থাকবার কথা, বা আজ আমরা সারা দিন কি কি করব। আপনি না থাকলে ও যার কাছে থাকছে তাকেব বলুন ওকে মনে করিয়ে দিতে আজ কি কি করব। রাগ না করে বলুন এই কাজটা অন্য কিভাবে করলে দুষ্টুমি হবেনা- হবে সবচেয়ে স্মার্ট আর লক্ষীবাচ্চার মত কাজ।

·         নিয়ম প্রতিষ্ঠা করুন ও সময় বেধে দিনঃ
বাচ্চারাও কিন্তু নিয়মের বাইরে থাকতে চায়না, একটু এদিক সেদিক হলেও দেখবেন কাছাকাছি সময়ে খাওয়া- ঘুম সেরে নেয়। বাগড়াটা তখনই বাজে যখন আপনি তাকে বলবেন- আসো এখন খাবে বা এখন ঘুমাবে এবং ক্ষেপে একপ্রকার জোড় জবরদস্তি করেন। জবরদস্তি ইস নট দ্যা সোলুশন। ওকে বোঝাতে হবে এখন খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনাকে বা ও যার কাছে থাকছে তাকে কৌশলী হতে হবে। আদর দিয়ে তাকে তার নির্ধারিত সময়ে ঘুম ও খাওয়ার অভ্যেস করা চাই। মনে রাখবেন- বাবু যদি খেতে খেতে কার্টুন দেখতে চায়, এবং আপনার নিয়মে তা যদি ‘নিষেধ”ই হয়ে থাকে তবে তা বলবৎ রাখুন। এই একটাই দেখছে বলে আজকের জন্য ছেড়ে দিলে ও রোজ আপনার পরীক্ষা নেবে। তাই কিছু কিছু হোম রুল প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
 
·         ছোয়ায় রাখুনঃ
বাচ্চারা সান্নিধ্য পছন্দ করে। ও নিজে নিজেই দ্রূত বড় হবার যতি সিদ্ধান্ত নিক না তোড়জোড় করুক- কোলের ওম বা আপনার আদর মাখা হাত কিন্তু ওর সবচেয়ে প্রিয়। আমার মেয়েকে যদি জিজ্ঞেস করি- ‘বাবা আদর করে? কেমন করে করে?” তাহলে ও নিজের গালে আলতো হাত বুলিয়ে দেখাবে বাবার আদর। তার মানে বাবুর কাছে বাবা মায়ের ছোয়া অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর, অনেক অনেক পাওয়া, অনেক বড় কোন অর্থ- ওর স্পেশাল হয়ে যাওয়া।

·         ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলুনঃ
বাড়িতে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলুন- তা আপনার সংসারে সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেই হোকনা কেন আর ফার্নিচার। বাসার ফার্নিচারগুলো এবং ইলেক্ট্রিক ওয়ারিংগুলো হতে হবে শিশুবান্ধব ও নিরাপদ, যাতে কথায় কথায় বারণ শাসন দরকার না হয়।
অন্যদিকে, বাবুর খেলনা ও গল্পের বইগুলো ওর হাতের কাছেই রাখুন। যাতে সে তার মত  রাজত্ব করতে পারে নিজের রাজ্যে।

·         জলকেলি, ক্লে/ বালি ঘর, ফিঙ্গার পেইন্টঃ
দূরন্ত শিশুটিকে শান্ত করবার অসাধারণ ফর্মূলা হতে পারে – পানি। উষ্ণ গরম পানির গোসলে বাবুরা অনেক আরাম পায়। গোসলটাকে আনন্দদায়ক করুন। বাথটাবে কিছু খেলনা ছড়িয়ে দিন। দু’জনই পানি ছলকান। বেবি শপগুলোতে এখন বাথ টাইম বুকস পাওয়া যায়। পানি লাগলেও কিছু হয়না বইগুলোর। গোসলের সময় এই বইগুলো দারুন হেল্পফুল।
শীতকাল হলে ওর গা মুছে দিন ভেজা কাপড় দিয়ে।
বাবুদের নরম শরীর ম্যাসাজের জন্য বেশ কিছু প্রোডাক্ট পাওয়া যায় এখন বেবি শপগুলোতে। ওগুলোর ফায়দাও নিতে পারেন।
‘ক্লে’ কিন্তু অসাধারন একটা খেলা। বাবুর চেয়ে বড়রাই মনে হয় এই খেলাতে নিমগ্ন হয়ে যায় বেশি। দু’বছরের পর থেকে সাধারণত ক্লে জায়েজ। কারণ এর ক্যান্ডিসুলভ গন্ধ-ই দু’ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এর ব্যবহার প্রোহিবিট করবার কারণ। তবে, সাথে যদি আপনি থাকেন তবে আর চিন্তা কি? দুজন মিলে লেগে পরুন মজার মজার সব শেপ বানাতে। এটা বাবুর মেধা ও চিন্তায় দারুন দোলা দেয়।
বালি দিয়েও একই ভাবে খেলা বাচ্চাদের জন্য মজাদার, সাথে যদি আপনি থাকেন। বারান্দার এককোণে সাগর পাড়ের মতন বানিয়ে ফেলুন ক্যাসেল। বালি নিয়ে খেলবার খেলনাও কিন্তু এখন সহজলোভ্য। ঝামেলাটা হল- পরিষ্কার রাখা। এইজন্যই বললাম- একটা কর্ণার- শুধুই বালি নিয়ে খেলবার। 

·          ওর অনুভূতিকে সম্মান করাঃ
ও ছোট বলেই ওর অনূভূতিকে বেশি সম্মান দিতে হবে; ওটা ওর হাতেক্ষরি জানেনইতো। ও যা দেখবে তাই শিখবে, রপ্ত করবে। এই ছোট বইয়েসেই কিন্তু ওর পারসোনালিটি ডেভেলপ হতে থাকে। আর তাই ওর আবেগ-অনুভূতিকে বিশেষ মর্যাদা দিন। ও যেন বুঝতে পারে যে ওর পছন্দ- অপছন্দ বা অসহায়ত্বকে আপনি ফেলনা মনে করছেননা।
এপ্রো
চ এভাবে করতে পারেন- “এত্ত শব্দে তোমার বিরক্ত লাগছে? জানো, আমারো ভালো লাগছেনা এত্ত শব্দ!” এইঅভ্যেস ওর মাঝে দ্রুত পরিবর্তন এনে দেবে।

·         উৎসাহ দিন, বাহ্‌বা দিন, কমপেয়ার নয়ঃ
বাবুর দুষ্টুমির জন্য ওকে অন্য কোন বাবুর সাথে তুলনা করে ছোট করবেন না। ওর দুষ্টুমিকে হাইলাইট না করে ওর ভালো কাজগুলোকে বাহবা দিন। অত মনোযোগ না দিলেও আমি খেয়াল করেছিলাম আমার কন্যা বাড়ি ফিরবার সময় বলছিল- ‘মা আমি দুষ্টু’। সেই সময় শুধরে দিয়ে আমি বলেছিলাম-‘ আমার মেয়েটা সবচেয়ে ভালো’। পরবর্তীতে বোধ করেছি কি ভয়াবহ অঘটনতাই না আমি বা আমরা করেছি নিজের অজান্তেই। আর অতটূকু বাবুটারো না জানি কতটা খারাপ লেগেছে নিজেকে দুষ্ট বলতে। যাহোক! ভূলে আটকে থাকলে চলবেনা। এগিয়ে যেতে হবে যাতে ভূলেও ভূল না হয়।

·         ইউসিং পসিটীভ লেভেলসঃ
বাবুকে যত পারুন পসিটীভ নামগুলো দিয়ে ডাকুন বা এনকারেজ করুন। ওর দুষ্টুমী বা কথা না শুনবার জন্য ও কে ‘দুষ্টু’- ‘পাজি’ না বলে বরং লক্ষীসোনা বলুন।

·         নির্বাচন করতে দিন ওকেইঃ
এই বয়সে বাচ্চারা নিজে নিজেই সব করতে চায়। বড় হবার জন্য উঠে পরে লাগা যাকে বলে। দেখুন আপনি আমি কিন্তু একেবারে উল্টোটা চাই তাইনা? হায়্রে ছেলে বেলা!! বয়সের দাবি!
যাহোক। ওকে নিজে নিজে কাজ করবার এই চেষ্ঠাগুলোকে অবিরত রাখতে দিন। হোক একটু দেরী। প্যান্টের এক পায়ে দু’পা ভরুক, উল্টো করে জুতো পরুক। চামচ দিয়ে ভূল-ভাল্‌ গ্রামারে খাক। পারছেনা তাই কেড়ে নিয়ে আপনি খা,য়ে দেবেননা। উৎসাহ দিন। অথবা নিজে ওর সামনে আরেকটা বাটি চামচ নিয়ে বসে পরুন। এখন হয়তো ঝামেলা বা সময় ক্ষেপন মনে হচ্ছে, কিন্তু খুব জলদিই বুঝবেন কি ব্লেসিংটাই না অপেক্ষা করছিল আপনার জন্য।

·         সরাসরি ‘না’ নয়ঃ
“বাবু! দুষ্টুমি করবানা” অথবা “ঘর নোংরা করবানা” না বলে বলুন –“চলো! আমরা লক্ষী হয়ে এই কাজটা করি”, “চলো এখন আমরা ঘর গুছাই। দেখিতো আমার বাবুটা কেমন ঘর গুছাতে পারে”।
অনেক সময় দেখবেন বাচ্চাকে যেটা না বলতে বা করতে বলবেন, ও সেটা বেশি করে করবে। এই  সময়টা ওরা পরীক্ষা করে ওদের গ্রহনযোগ্যতা বা ওদের লিমিট কতটুকু। ওকে জানতে দিন। কিন্তু কোমল ভাবে। ও ধিরে ধিরে আসলে নিজেকেই খুঁজে বের করছে।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আসলে পড়তে শুরু করলাম বাবুদের নিয়ে। শুরু করলাম তখন থেকেই, যখন আমার মেয়ে বলল- ‘মা আমি দুষ্টু”।  আমি শিশুবিশেষজ্ঞ নই। ধৃষ্টতাও দেখাই না তা হবার বা অনেক জানার। আমার কেন যেন পাঠ্য-পুস্তকেও আগ্রহ নেই-আমি কিবোর্ড চাপড়ানো মানুষ। নেট ঘেটে পড়া পর্যন্তই আমার সীমা। পড়ি আর টুকে রাখি। তারপর ঝোপ বুঝে কোপ- মানে বাস্তব জীবনে ব্যবহার। যেগুলো এপ্লাই করে সুফল পেয়েছি বা পাচ্ছি- তা-ই লিখলাম। উপকারে আসলেই আনন্দিত।
সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা- আমাদের সন্তান দেবার জন্য। তা নয়তো বুঝতামই না- আমরা আমাদের বাবা-মায়ের কত আদরের, কত কষ্টের ফল।

·         Raising Your Spirited Child, by Mary Sheedy Kurcinka
·         The Difficult Child: Expanded and Revised Edition, by Stanley Turecki and Leslie Tonner
·         Living With the Active Alert Child, by Linda Budd
·         The Fussy Baby Book: Parenting Your High-Need Child From Birth to Age Five, by William and Martha Sears


No comments:

Post a Comment