Monday, 7 October 2013

মেটারনিটি লিভের পর অফিস ফেরার প্রস্তুতি





অলস দুপুরে নিরলস খাটা মানুষ আপনি। বুদ্ধিদীপ্ত, কর্মচঞ্চল! টিম কে লীড করছেন, মিটিং, ব্রিফিং মিলে নয়টা – পাচঁটার টগবগ জীবন। ক্যারিয়ারটা খুব গোছানো; আপনার গোছানো সংসারের মতই। কোথাও কোন কম্প্রোমাইসের লেশ মাত্র নেই। এরই মাঝে জীবনে পরিবর্তন। সময়, স্বামী-স্ত্রীর কেমিস্ট্রি, পরিবারের প্রেশার কিংবা সারপ্রাইস গিফট- এই মাল্টিপাল অপশনের যেকোনো একটিতে গোল্লা ভরাট করে আপনি সন্তান সম্ভবা। তাতেও কোন খামতি বা কমতি নেই আপনার- অফিসের প্রতি ডেডিকেশনে। তাছাড়া আপনার টিমও আপনাকে যথেষ্ট স্পেস দিচ্ছে- তা সহানুভূতি বা দূর্বল ভেবে নয়; এবং আপনি তা ননও।
প্রেগনেন্সির নয়টা মাস যেন নয় যুগ! ডিউ ডেট এর ক্যালেন্ডার-এ ক্রস মার্ক ফেলতে ফেলতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও দিন এগোচ্ছেনা বলেই ঠেকে। কিছুটা শারীরিক অস্বস্তি কিংবা অনাগত সন্তানকে নিয়ে আবেগের উথাল পাতাল যা- ইহোক না কেন দিন না কাটার এই দিনগুলো সত্যিই অসাধারণ। দূঃখজনক হলেও সত্য যে আপনার পেটের পটে আঁকা শিশুটি, আপনার কোলে যেদিন থেকেই তার শরীরের ওম ছড়িয়ে দেবে, সেদিন থেকেই দিনগুলো লাগাম ছাড়া! ম্যাটারনিটি লিভ! হায়রে আমার ম্যাটারনিটি লিভ!

বুদ্ধিদীপ্ত, কর্মচঞ্চল, ডেয়ারিং ওয়ার্কিং ওমেন, যে এইতো ছ’মাস আগেও দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন অফিস- আজ মনে হচ্ছে সব কেন যেন অনিশ্চিত। বাবুর কেয়ার, অফিসের ডেস্ক – সব! সব নিয়েই হিম-সিম খাচ্ছেন। ওয়েট ইন দেয়ার গর্জিয়াস! আপনার জন্য কিছু আছে বলার- যা আমি অন্যদের উপদেশ থেকে পেয়েছি কিংবা  হোচোট খেয়ে শিখেছি আর ভেবেছি- যদি কেঊ বলবার থাকত!
কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য আপনার যেমন রয়েছে  শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির ব্যপার, তেমনি রয়েছে ছোট্ট শিশুটার-ও। ওকেও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে বলেই আপনাকে শক্ত, দৃর ও ধৈর্যশীল হতে হবে। এই সময়টা আর অফিস পাড়ায় ফেরার প্রথম কইয়েকটা দিন খুব বেশি ক্রুশিয়াল।

1.       অফিসের সময়ের সাথে সাথে গুছিয়ে নিন রুটিন
ধরুন আপনার অফিস টাইমিং ৯-৫ টা। হাতে গোনা কিছু দিন আগে থেকেই এই টাইমিংটা প্রাকটিসে আনুন। সকাল সকাল ঘুম থেকে ঊঠে নিজেকে ও বাবুর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অর্গানাইজ করুন যাতে এমন ঠেকে যে একটু পরই আপনি ছুট দিবেন অফিসে। এটা প্রয়োজন- যাতে অফিসের দিনগুলোতে আপনার খুব বেশি এডজাস্ট এর প্রয়োজন না হয়; ওসময় এডজাস্ট করার  থাকবে বহু কিছু।


2.       গোটা-কদিন আগেই জয়েন করুন; ছন্দ আনতে
একে বারে কাগজ-এ কলমে জয়েন না করলেও হাতে ক’দিন রেখেই জয়েন করুন। এত দিনের লম্বা গ্যাপে আপনি যাতে নিজেকে একেবারেই বেসামাল না মনে করেন তার জন্যই রিল্যাকস্‌ড ওয়েতে অফিস করুন। বুঝে নিন আপনার দাবড়ানি-চাপরানি খাওয়া ডেস্ক আর ডেস্কটপটা।

3.       বাবুর ফিডীং হ্যাবিট
বাবুর জন্যও হুট করে আপনাকে ছেড়ে থাকাটা বেশ কঠিন। বিশেষ করে ওর ফিডিং রুটিনের ক্ষেত্রে। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং এ অভ্যস্ত হলে ওকে আস্তে ধিরে ফিডিং বোতল বা চামচে পাম্প করা দুধ অথবা ফরমুলা খাওয়ানোর অভ্যস করা উচিত। রিসার্চ বলে যে সাধারণত দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে এই হাবিট না গড়তে না পারলে পরবর্তীতে বেশ বেগ পেতে হয় মায়েদের। তাই যারা কাজে ফিরবেনই, তাদের আগে থেকেই বাবুকে বোতল বা চামচে খাওয়নোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া ছ’মাস থেকেই যেহেতু বাবু বাড়তি খাওয়া শুরু করে থাকে; তাই গোটা দশেক দিন আগে থেকেই কিছু কিছু (পিউরী করা ভাত বা সুজি) খাবার ইনট্রুডিউস করা মন্দ নয়।

4.       বাবুর ডে-লং কেয়ার
বাবুকে কার কাছে রাখবেন কাজে ফিরবার পর তা নিশ্চিত এত দিনে ঠিক ঠাক। তাই অফিস রুটিনের সাথে তাল মিলিয়ে বাবুকে তার কাছে অভ্যস্ত করুন। আপনি পাশে থেকেও একটু দূরে থাকুন। এতে বাবুর অভ্যস্ততার সাথে সাথে আপনি বাবুর দেখভালে নিযুক্ত যিনি থাকছেন (নিকট আত্মিয়ই হোক কিংবা পেইড লেবার) তারও শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গড়ে উঠছে, একই সাথে বাবুর সাথে তার কেমিস্ট্রি। সেই সাথে আপনার আস্থা আর মানসিক স্থিরতাও অনেকটাই একটা শেপ-এ চলে আসবে।

5.       নিজেকে প্রস্তুত করুন
ক্যরিয়ারিস্ট বলেই যে আপনি শিশু ও সংসারের প্রতি অবহেলা বা অন্যায় করছেন তা নয়। আপনি যা করছেন সবই পরিবারের জন্য। এটা সত্য, কাজে ফিরবার আগের কটা দিন ও ফিরবার পরের কতগুলো দিন খুব টাফ। এসময়েই অনেকে ভুল কিছু ডিসিশন নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এবং অতঃপর টানেন জীবনভর মন ভারের বোঝা। যা হোক। এখন কিন্তু টিনেজ টাইম নয় যে বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাগ করে চুল কেটে ফেললাম। ধৈর্যের পরীক্ষায় আপনাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আপনার সহকর্মী, আপনার বস কে বুঝিয়ে বলুন- তারা আপনাকে স্পেস দেবে। তবে সবচেয়ে বড় সাপোর্টটা নিজেকে নিজের দিতে হবে; আর যার কথা না বললেই নয়- আপনার জীবনসংগী। 

(চলবে)

নতুন অতিথির জন্য



বাড়িতে এসেছে নতুন অতিথি। গুট গুট করে তাকায়, আবার ঘুমিয়ে পরে। কখন আবার ভাঙ্গবে ঘুম? বাবুটাকে বাড়ি আনবার পর পরই শুরু হয় টেনশন- কি কি লাগবে ওর যত্ন আত্তিতে? আবার বাবুটা যদি হয় নিকটজনের/ আত্মিয় বা বন্ধুবান্ধবের তাহলেও টেনশন- ছোট বাবুটাকে দেখতে যাওয়ার সময়ক্ষণ একদম ঠিক ঠাক। ব্যস ! শুধু হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা কি দিয়ে সাজাই উপহারের ডালি। হুম, বাবুটাকে তো আর খালি হাত এ দেখতে যাওয়া যায় না। আবার কি নিলে কাজে লাগবে, কোনটা আবার আর দশটা উপহারের মত অপ্রয়োজনীয় ঠেকে- ঠাহর করা যাচ্ছে না, তাইতো? আবার কেউ বা ভাবছেন- যাওয়ার সময় একটা বেবি গিফট সেট নিয়ে যাব বাজেটের মধ্যে। সত্যি বলছি এই রকম দায় এড়ানো উপহারগুলো কাজেই লাগেনা। শুধু শুধু বাড়ির কিছু জায়গা জুড়ে পরে থাকে। উপহার কি না- তাই পরিত্রাণ পাওয়া যায়না কাউকে হস্তান্তর করে। পরে উপযোগের সাম্ভাব্য সময় গড়িয়ে গেলেই আস্তাকূড়ে চলে যায়।

নিজের বা পরিবারের জন্য কিছু কিনবার সময় আমরা খুদি খুদি অক্ষরগুলোতে চোখ বুলোতে ভুলিনা, জিনিসটা ভালো তো? অথবা ঠিকই নেড়েচেড়ে উলটে পালটে দেখে নেই মেয়াদ কত দিনের? তাহলে অন্যবাড়ির ছোট্ট সোনার জন্য কেন নয়? উপহার সামগ্রীতে যাবার আগে কিছু ব্যাপার খেয়াল করে নেই-

1.       বাবুর ত্বকে লাগাবার প্রোডাক্ট হলে তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হই
2.       মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার দিন খেয়াল করে নেই
3.       কোয়ান্টিটি অপেক্ষা কোয়ালিটিতে নজর দেই
4.       উপহারটির ক্ষেত্রে বাবুর বয়স বিবেচনায় রাখি
5.       এমন কিছু বাছাই করি যা পেলে নতুন বাবুর বাবা-মায়ের কিছুটা হলেও কেনাকাটার ঝামেলা কমে
6.       দেয়ার জন্য দেয়া সুলভ মানসিকতা পরিবর্তন করে যথার্থ কাজের কিছু দেই, অযথা জামাকাপড় বা সস্তা গিফট প্যাকের দিকে না ঝুঁকি
7.       বাবুর মায়ের দিকেও লক্ষ্য করি, তার কথা ভুললে চলবেনা

এবারে নজর দেই সামগ্রীগুলোর দিকেঃ
নিজের বাবুর জন্যই হোক কিংবা পরিচিতজনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর লিস্ট করতে গেলে দেখবেন- ক্ষুদে এই মানুষটার ফর্দ আপনার চেয়েও বেশি। এইজন্যই বলছিলাম এমন কিছু বাছাই করুন যা পেলে নতুন বাবুর বাবা-মায়ের কিছুটা কেনাকাটার ঝামেলা কমে। আর যদি নিজেই বাবা-মা হন তাহলে তো কিনতেই হবে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রায়োরিটি ফ্যাক্টর বিবেচ্য-


ক্লিনিং এন্ড হাইজিন প্রোডাক্টসঃ

1.       অয়েল ক্লথ (ঘরের জন্য)
2.       অয়েল ক্লথ (ট্রাভেল এর জন্য)
3.       ডিস্পোসেবল ডায়াপার (দিনের জন্যঃ এটা সাধারণত চার ঘন্টা বাদে বাদে পরিবর্তন করতে হয়)
4.       (ঐ) (আলট্রা- এটা রাতের জন্য, সাধারণত ১২ ঘন্টা সাপোর্ট দেয়)
5.       প্লাস্টিক প্যান্ট
6.       কাথাঁ
7.       কাপড়ের ন্যাপি বা নিমা
8.       বিপ
9.       ছোট নরম রুমাল সেট
10.    ভ্যাসলিন (পারফিউম ছাড়া- ডায়াপার এরিয়ার জন্য)
11.    লিকুইড এন্টিসেপ্টিক (কাপড় ধোয়া ও ঘর মোছার জন্য)
12.    লিকুইড হ্যান্ড স্যানিটাইসার
13.    কটন বাড (থিন- নাক ও নাভি পরিষ্কারের জন্য)
14.    ওয়েট ওয়াইপস
15.    নেইল কাটার (বাচ্চাএর জন্য আলাদা পাওয়া যায়)
16.    নরম তোয়ালে (গোসলের জন্য)
17.    বাথ টাব (এখন একদম প্রথম বারের মত যারা মা হয়েছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি- বাজারে এসেছে ইনক্লাইন বাথ সেট। হেলান কেদারার মত দেখতে নেতের এই গোসলের অনুষংটি বাথ টাব বা গামলায় সহজেই এটে যায়। বাবু হাত থেকে  ফসকানোর ভয় নেই। স্যার বা ম্যাডামকে ওতে শুইয়ে রেখে দুহাত দিয়ে আরাম করে জলকেলি সেরে নিন সোনামনির। কিডস এন্ড মমস এ খোজ নিতে পারেন)

কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজঃ

1.       পাউডার
2.       লোশন
3.       ক্রিম
4.       ওলিভ/ সানফ্লাওয়ার অয়েল
5.       বডি ম্যাসাজ অয়েল (বাথ টাইম, বেড টাইম)
6.       ভ্যাসলিন
7.       সোপ (লিকুইড হলেই ভালো)
8.       শ্যাম্পু

ঘরে- বাইরেঃ

1.       ট্রাভেল ব্যাগ (ছোট+বড়)
2.       ফিডার গরম রাখার জন্য আলাদা ফিদার কভার পাওয়া যায় যা বারির বাইরে গেলে বেশ উপকারে লাগে
3.       বাবুকে বাইরে নেবার জন্য নরম তোয়ালে বা র‍্যাপিং টাওয়েল
4.       গুড়ো দুধ/ সেরেল্যাক নেবার চেম্বার

ফীডিংঃ

1.       ফিডার (কাঁচের হলেই ভালো)
2.       ফিডার ব্রাশ
3.       ফিডার ধোয়ার জন্য লিকুইড ক্লিনার (বাবুদের জন্য নামি দামি ব্রান্ডগুলো পৃথক ক্লিনার-এর আয়োজন রাখে।)
4.       থার্মোফ্লাক্স

ইমারজেন্সিঃ

1.       থার্মোমিটার
2.       নাসাল বাল্ব
3.       ডাক্তার প্রস্তাবিত কিছু মেডিসিন (ন্যাসাল ড্রপ, শিশুদের ভ্যাপোরাব)

বেডিংঃ

1.       মশারী
2.       মাথার বালিশ (দুটো হলে ভালো এবং বেশ কয়েক সেট কভার। বাচ্চাদের মাথা খুব ঘামে)
3.       কোল বালিশ
4.       কম্বল (ছোট কম্বল আলাদাই পাওয়া যায় ওদের জন্য)
5.       গায়ে দেবার কাঁথা (বানিয়ে নিলেই ভালো, কিনতেও পাবেন বাহারী কাঁথা)

অর্গানাইজারঃ

6.       প্লাস্টিক ড্রয়ার ইউনিট (আমি আর.এফ.এল এর চার তাকের-টা ব্যবহার করছি)
7.       ঝুড়ি (ফিডার ধোবার পর পানি শুকাবার জন্য)
8.       কাপড় শুকাবার ক্লিপ সেট (একসাথে অনেকগুল ছোট কাপড় অল্প জায়গায় শেটে যায়)
9.       বাবুর ডায়াপার ও ময়লা ফেলবার জন্য কভার সহ বিন
10.    বাবুর ময়লা কাপড় রাখার ঝুড়ি
  
আরো কিছুঃ

1.       হাত-পা মোজা (হাত মোজাটা জরুরী, নয়তো খামচি এন্ড আচড় ইস এ মাস্ট)
2.       চিরুনী সেট (এতে ছোট্ট বাবুদের হেয়ার ব্রাশ-ও থাকে)
3.       হট ওয়াটার ব্যাগ (এটা বাবুর মায়ের জন্য)
4.       ফিডিং পিলো (এটাও বাবুর মায়ের জন্য। বাজারে না পেলে বানিয়ে নিতে পারেন কিডনি শেপের একটু উচু বালিশ)



(আরো কিছু মনে পরা মাত্রই আপডেট হবে)

বাবুদের সাধারণ সর্দি-কাশি




২০১১, অক্টোবর। আমার জীবনের নতুন মোড়ক উন্মোচন! ছোটকালে যখন মা-বাবার বিয়ের ছবি  দেখতাম তখন অন্য বাচ্চাদের মতন আমিও অভিমান করে বলতাম- ‘আমাকে নাও নাই কেন তোমাদের বিয়েতে’? দিন বদলায়!
আজ আমার কোল জুড়ে আমার শৈশব খেলা করে!! কিন্তু আমার মতন হয়নি মোটেওবাবার প্রতিলিপি বা অনুকরণ বিড়াল (কপি ক্যাট)গুগল ট্রান্সলেট্রের কাজটা আমাকেই দেয়া উচিত ছিল। যাই হোক। ছোট্ট এতটুকুন জুনায়রার বয়স এখন ২ বছর ছুঁই ছুঁই। তাই বলে কিন্তু তাকে ছোট মানুষ- কিচ্ছু বোঝেনাবললে ভূল হবে। আমার শশুরি মা’-এর ভাষ্যমতে,-‘’এইটা হইল অনেক আগের যুগের আত্মামানে আগের দিনের মানুষের মত জ্ঞানী! বলে রাখা ভাল,  তিনি তার পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারে খুবই গুণগত মান বিচারী এবং তার কথার অন্যথা পছন্দ করেন না। এর মানে এই নয় যে তিনি অধিক আদরে বিগড়ে যাওয়া, জিদ্দি বাচ্চা। তবে এ কথা সত্য এই ২২ মাসের মিস. জুনায়নার ভয়ে আমাদের দুই বাড়ির (মানে আমার মায়ের বাড়ি ও শশুর বাড়ি) বাঘ ও মহিষ এক ঘাটে পানি খায়।
 
মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ওর অস্তিত্ব যেদিন থেকে টের পেয়েছি সেদিন থেকেই আমি পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ উপহারটি নিয়ে প্রচুর পড়েছি এবং পড়ছি। (আগেই বলে রাখি, আমি সাইন্সের ছাত্রী নই)। এগুলো আমাকে বিভিন্ন সময় অনেক সাহায্য করেছে। প্রচলিত অনেক প্রথা আমাদের অনেক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়। বিশেষ করে নতুন যারা মা হয়েছেন তাদের জন্য। জানছেন ভূল হচ্ছে তবুও কিছু করতে পারছেন না কারণ হয়তবা ইতোমধ্যি শুনে ফেলেছেন- তাই বলে কি মা-খালারা বাচ্চা মানুষ করেনি?!’  অথবাআমাদের বাচ্চারা কি মরে গেছে?’
 

নাহ! তাদের প্রতি কটু কথা বলতে আমার অবস্থান নয়। নতুন শিশুটি যেমন আপনার কলিজার টুকরা, তেমনি তাদেরও অনেক অনেক আদরের। তাদের সাথে নিয়েই তাদের বোঝাতে অথবা কিছুটা বোঝা টানতে হবে কথার, তবে নিরাশ হবেন না। আজকাল সকলের হাতের কাছেই মডেম রয়েছে। একটু খুজুন, আপনি আপনার শিশুটিকে নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বস্ত সাইটগুলো থেকে পরামর্শ পাবেন। খুব বেশি অস্বস্তিতে ভুগলে আপনার হাতের কাছে থাকা বাবুর ডাক্তারকেই ফোন করুনা, অথবা বাবুর বাবাকে নিয়েই চলে যান তার কাছে। তবে হাতের কাছে যখন মডেমটা আছে তখন আর চিন্তা কি?! পড়ুন। এর বিকল্প হতেই পারেনা।
আগেই বলেছি আমি সাইন্সের ছাত্রী নই, বরাবর মানবিক বিভাগের ছাত্রী। তবে নিজে যেসব সুবিধাগুলো পেয়েছি বাবুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে; সেগুলোতে জানাতে চাই; যদি কারো কিছুটা উপকার হয়, তবেই আমার সার্থকতা। 


আজ বলব সাধারণ সর্দি-কাশি-এর কথাঃ

অনেক বাবা-মাই বাবুর সর্দি কাশি হলে সরাসরি চলে যান ফার্মসীতে। এমেরিকান একাডেমি অফ পেডেয়াট্রিক্স এক্ষেত্রে২ বছরের নিচের শিশুদের এরূপ ঔষধ সেবনের ওপর না-খুশ! কেননা এরূপ ঔষধ সেবন দু’বছর বয়সী শিশুদের জন্য অকার্যকর এবং ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে।
 

এক্ষেত্রে আপনার শিশুর জন্য আপনি এমন কিছু করতে পারেন যাতে সে কিছুটা ভালো অনুভব করে-

১. ঘুমঃ
 
বাবুকে ঘুমোতে দিন। ও যত ঘুমোবে ততই কিন্তু ওর শরীর নিজেকে সারিয়ে তুলবে। ঘুমোক! ভাবছেন ওর খাবার সময় পার হয়ে যাচ্ছে! বলে রাখি, আপনি যতই উপোষ দিন না কেন; বাবু কিন্তু তা করবে না, ওর খাবার সময় হলে কিন্তু ও নিজেই জানান দিবে। বাবু নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করলে ওর বালিশটা একটু উচু করে দিন। আরাম পাবে।

২. বিশ্রামঃ
শুয়ে শুয়ে ওর প্রিয় কার্টুন টা দেখতে দেখতে কিন্তু ওর বিশ্রাম হতে পারে। কিংবা ওকে গল্প বা হাট্টি মাটিম টিম শোনাতে শোনাতেও ওর বিশ্রাম নিশ্চিত করতে পারেন আপনি নিজেই। বাচ্চারা রঙ্গীন ছবি পছন্দ করে; পুরোনো কিছু ম্যাগাজিনের পাতা উল্টোন না ওকে নিয়েই। ওর শুধু প্রয়োজন একটু আরামদায়ক গা এলাবার যায়গা। আপনার কোলের উষ্ণতা ছাড়া ভালো আর কি-ই বা হতে পারে!


৩. উষ্ণ ভাপঃ
 উষ্ণ পানির ভাপ নাক বন্ধ ভাব খুলতে সহায়তা করে। অত্তো ছোট বাবুর পক্ষে বড়দের মত পানির পাত্র থেকে গরম ভাপ নেওয়া সম্ভব নয়। বাজারে খুব কম দামেই পাওয়া যায় হিঊমিডিফায়ার।
সেদিনকে গুলশানে হোমটেক্স-এও দেখেছিলাম। কিনে নিতে পারেন। নির্দেশিকা অনুযায়ী ঘরে বাষ্প তৈরী করতে পারেন যখন আম্মুসোনা বা আব্বুটা ঘুমিয়ে আছে বা আপন মনে খেলছে।


 তা না হলে, ওয়াশ রুমে গরম পানির পাত্র রেখে/ নলে গরম পানির ব্যবস্থা (গিজার) থাকলে সেটা ছেড়ে দিয়ে একটু বাষ্প তৈরী করে নিন নাহয়। দুজন মিলে থাকুন ১০-১৫ মিনিট। সাথে কিছু পানিতে ভাসা খেলনা নিয়ে নিন। সময় ভালো কাটবে।
বাবুর বয়স ২ বছরের বেশি হলে ওর গোসলের পানিতে মিশিয়ে দিতে পারেন কয়েক ফোটা মেনথল, হাতের কাছে ফার্মেসীতেই পাবেন।

৪. স্যালাইন ওয়াটারঃ
এটি খুবই কার্যকরী একটা জিনিস যা আমি জুনায়রার ক্ষেত্রে ব্যবহার করি/ করেছি। বাজারে শিশুদের জন্য এরকম স্যালাইন পাওয়া যায়। আমি নরসল ড্রপ ব্যবহার করেছি। নিজেও বাড়িতে বসে তৈরী করে নিতে পারেন সহজেই। এর জন্য প্রয়োজন- আধা চা চামচ লবণ ও ৮ আউন্স পানি। এটি কেবল মাত্র ১ দিন ব্যবহারের জন্য, ২৪ ঘন্টা অতিক্রম করলে এতে ব্যকটেরীয়ার সংক্রমণ হয়। তাই সাবধান। এটা ড্রপারের সাহায্যে ১ ফোটা করে প্রতি নাকে দিতে পারেন যখন নাক বন্ধ ভাব দেখবেন। 

৫. বাল্ব সিরিঞ্জঃ
 ছোট বাবুরা নাক ঝারা যাকে বলি- সেটা করতে পারেনা বিধায় নাকে শ্লেষা থেকে যায় ও অস্বস্তিতে ভোগে। বাল্ব সিরিঞ্জ দিয়ে সহজেই টেনে আনতে পারেন শ্লেষা। এটি একটি পাম্প এর মতন, নিচের দিকটাতে রয়েছে সরু নল। নলটি নাকের ছিদ্রের কিছু দূরে প্রবেশ করতে হবে পাম্প চেপে রেখেইএর পর আস্তে আস্তে পাম্প ছাড়তে থাকলে নাকে জলে থাকা শ্লেষা বেরিয়ে আসবে নলে। তবে জুনায়রার মত অস্থির বাচ্চার ক্ষেত্রে একটু ঝামেলাদায়ক। এক্ষেত্রে দুষ্টুটা ঘুমোলে কাজটা করতে পারেন। 



৬. ভ্যাপর রাবঃ
 
বিদেশে শিশুদের জন্য ভিক্সের মত ভ্যপর রাব বাজারে পাওয়া যায়। আমরা সাধারণত যেটি ব্যবহার করি সেটি একদম ছোট বাচ্চাদের জন্য সেটা উপযোগী নয়। জুনায়রার যখন ১৫ দিন তখন একবার ঠান্ডা লেগে হুলুস্থুল! তখন একটা কাপরে কিছুটা ভিক্স মাখিয়ে ওর নাকের নিছু নিরাপদ দূরত্বে ধরে রেখেছিলাম, ওর বিপেও হাল্কা মাখিয়ে রেখেছিলাম। উপকার পেয়েছি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ওটা অর ত্বকে বা চোখে যেন না যায়। 
ছোট বাচ্চাদের জন্য আলাদা এই ভ্যাপর রাব  আমাদের এখানে মনে হয় পাওয়া যায়না। লাজ ফার্মাতেও খুজেছি, পাইনি। সরাসরি এটা ঠান্ডার ওপর কার্যকরী না হলেও আরামদায়ক।

৭. পানি ও তরল খাবারঃ
 
এটা আসলে নতুন করে কিছু বলার নয়। পানি, জুস, দুধের পাশাপাশি ওকে মুরগীর স্টু করে দিন। খুব উপকারী। জুস অবশ্যই বাড়িতে তৈরী- বোতলজাত মিষ্টি কুমড়া নয়। ছয় মাসের কম বয়সী বাবুদের বুকের দুধ/ ফর্মূলাই যথেষ্ট। ১০ মাসের বেশি বয়সী বাবুদের কুসুম গরম পানিতে অল্প মধু ও লেবুর রস দিয়ে খায়াতে পারেন। আরাম পাবে। উল্লেখ্য, ১ম জন্মদিনের আগে বাবুকে মধু দেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদিও বাবুর জন্মের পরপর ওর মুখে মধু দেবার প্রচলণ এদেশে বহু পুরোনো। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় দেখা দেছে এটি ওদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৮. সরিষার তেলঃ 
৩ মাসের কম বয়সী বাবুর গায়ে এটি ব্যবহার না করা ভাল। যদিও এটা আমাদের প্রচলিত প্রথার মত। আমার অবস্থান এর কড়া বিরোধে। ঠান্ডা লাগা বাবুর মাথায় তেল দেয়া থেকে বিরত থাকুন, ওর ঠান্ডা কিন্তু আরো বেগতিক হবে। 


আজ এপর্যন্তই। নিজের সন্তানের জন্য যা করছি তা যদি পাঠক বাবা-মা’র কিছুটা হলেও উপকারী মনে হয় তবেই আনন্দ। কারণ আমার বাচ্চাটা আমার জীবনে যেই পরিবর্তন এনেছে তার একটি হল--- ও আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভালোবাসার সংজ্ঞায় যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা
ভালো থাকবেন সবাই।