পটি ট্রেনিং যে মায়েদের জন্য কি পরিমাণ শরীর থেকে লবণ নিংরানো কাজ হতে পারে;
আগে কল্পনাই করতে পারিনি। যখন হাত কলমে (আদতে ‘পটি’ নিয়ে) কন্যার সাথে মুখোমুখি
অবতীর্ণ হলাম; কন্যা আমার একেবারে ঝাসি কি রাণীর মত যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল। মানে,
সরাসরি অনড় অবস্থান!
এস-ইউশুয়াল শুরু করতে হল- বিস্তর পড়ালেখা !
পটি ট্রেনিং এর আদর্শ সময় হল- ১৮ মাস থেকে ৪ বছর। অবশ্য আমাদের দেশে বাচ্চারা
আরেকটু আগে শেখে; যেহেতু ডায়াপার কালচার অত বেশি জনপ্রিয় এখনো হয়নি। তাই বলে
একেবারেই যে নেই; তাও বলা ঠিক হবেনা।
পটি ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে এমন কোন বাধাঁ ধরা নিয়ম নেই যেটি পারফেক্ট বলে
স্বীকৃত। তবে আমাদের যুগ যুগের মা-খালাদের শিশু পালন শিল্প এবং শিশু বিশেষজ্ঞদের
প্রচেষ্টার গুণে; শিশুদের সুবাশ মাখা প্রতিটি গৃহেই কিন্তু কিছু যাদু মন্ত্র আঁনাচে-কাঁনাচে
ছড়িয়ে আছে। খুঁজে শুধু নিতে হবে সোনার কাঁঠি আর রূপোর কাঠির মাঝে কোনটি ভাংবে ঘুম!
প্রকেসর আজ্রিন ও রিচার্ড এম. ফক্স তাদের যৌথ প্রয়াশ- ‘টয়লেট ট্রেনিং ইন লেস
দেন এ ডে’ (১৯৭৪) এ এরকমই বেশ কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস এর অবতারণ ঘটিয়েছেন। আবার উন্নত
দেশগুলোতে বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যারা মা বা শিশুর দেখাশুনায় নিযুক্ত যিনি তাদের
তিন দিনের কোর্স করিয়ে থাকে। যদিও তিন দিন বলা হচ্ছে; তবে ঐ তিন দিনের জন্য বেশ
কিছু দিন আগে থেকেই গ্রাউন্ড ক্রিয়েট করে নিতে হয়; যা প্রায় তিন মাসের মত একটা
যাত্রা। তিন দিন হল- শিওর শট। মানে; এই তিন দিনের কর্মকান্ড পটি ট্রেনিং কে
এক্টীভেট করবে চিরস্থায়ীভাবে। তবে, এক্ষেত্রেও যে ১০০% সাফল্য আসবে তা বলা কঠিন।
সেক্ষেত্রে, আবারো বিরতী দিয়ে নতুন করে প্রকল্প হাতে নিতে হবে।
শিশু প্রস্তুত কিনা? ঃ
পটি ট্রেনিং শুরুর আগে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল করে নিতে হবে। মূলত, এই দেখে
নেওয়ার মানে হচ্ছে শিশু আসলেও এই মূহুর্তে পটি ট্রেনিং-এর জন্য প্রস্তুত কিনা
খেয়াল করা। চেকলিস্টটি এরকম-
v শারীরিক সংকেত-
·
কনফিডেন্টলি হাটতে এবং দৌঁড়তে পারে কিনা।
·
প্রস্রাব করবার সময় পর্যাপ্ত পরিমানে করছে কিনা, নাকি অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ
পর পর করছে।
·
নির্দিষ্ট বা তার আশেপাশের সময়ে মলত্যাগ করছে কিনা।
·
দিন বা রাতে ঘুমালে অন্তত দু’ঘন্টা শুকনো অবস্থায় থাকছে কিনা। এটা মূলত যাচাই
করা যে ওর ব্লাডার এর মাস্লগুলো পূর্ণভাবে ডেভেলপ বা শক্তিশালী হয়েছে কিনা।
v আচরণগত সংকেত-
·
বেশ কিছু সময় (৫ মিনিট নিদেনপক্ষে) কোন কিছু
নিয়ে নিবিষ্ঠ মনে বসে থাকতে পারা।
·
নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে বা পড়তে পারা।
·
ভেজা অবস্থায় থাকলে অস্বস্তিতে ভোগা।
·
পায়খানার বেগ পেলে তা বলে বা ইংগিত দিয়ে প্রকাশ করতে পারা।
·
স্বাবলম্বী আচরণ প্রকাশ করা।
·
কোন কিছু করতে পারার (সাফল্য) পর; তার জন্য গর্ববোধ করা।
·
টয়লেট বা পটি ব্যবহার শিখবার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ না দেখানো।
·
সহযোগীতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করা।
v জ্ঞানীয় বা কগনিটিভ সংকেত-
·
প্রস্রাব বা
পায়খানার বেগ পেলে তার শারীরিক তাড়না বুঝতে পারা। এক্ষেত্রে পটিতে গিয়ে বসতে হবে
বা মা-বাবা/ যার কাছে থাকছে তাকে বলবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করা (সাহাযু নেবার জন্য)।
·
সাধারণ নির্দেশগুলো
পালন করতে পারা।
·
যেখাঙ্কার জিনিস
সেখানে রাখার বিষয়টি বুঝতে ও রাখতে পারা।
·
‘পায়খানা’ বা ‘প্রস্রাব’
কে বোঝানোর মত শব্দগুলো রপ্ত করা।
সাধারণত মেয়ে শিশুরা ছেলে শিশুদের
আগে পটিতে অভ্যস্ত হয়। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই নিমোক্ত বিষয়গুলো কিছুটা সময় বেশি নিয়ে
নিতে পারে। যেমন-
·
নতুন ভাই বা বোন (সিবলিং) আসন্ন বা এসে থাকলে।
·
প্রি-স্কুলে / ডে-কেয়ারে থেকে থাকলে।
মনে রাখতে হবে- এটা একটু বিলম্বই
কেবল। এবং এর থেকে শিশু বের হইয়ে আসবে। সময় দিতে হবে। কারণ; প্রতিটা শিশুই আলাদা
এক একটি সত্ত্বা।
করণীয়ঃ
বাচ্চাদের পটি ট্রেনিং দেয়ার
ক্ষেত্রে কার্যকরী উপায় হল তাদের ডায়াপার, ট্রেনিং প্যান্ট বা ন্যাপি থেকে দূরে
রাখা। এমনটাই কিন্তু বলেন আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞরা। আমাদের মা-খালারাও কিন্তু এর
কড়া সাপোর্টার। শুধু মাত্র ঘুমের সময় সেগুলো ব্যবহার ইস ওকে । তবে, বাবু জেগে থাকা
অবস্থায় নিজেকে কিছুটা মানিয়ে নিতে পারলে সে ক্ষেত্রে ঘুমের সময়ও ডায়াপার বা
ন্যাপি প্রয়োজন্টা ধিরে ধিরে কমিয়ে আনতে হবে। সেগুলো পরের কথা। আগে বেসিকগুলো দেখে
নেই-
·
দেখে শেখাঃ
বাচ্চাদের শিখাবার ক্ষেত্রে এটা একতা উপযুক্ত মাধ্যম। বাচ্চারা দেখে বা অনুকরণ
করে শেখে। এ প্রসংগে সান ফ্রান্সিস্কোর
একটি প্রি-স্কুলের শিক্ষক ও শিশু বিষেশজ্ঞ ফেলম বলেন, “সবচেয়ে ভালো পন্থা হল
শিশুকে বাবা বা মায়ের সাথে টয়লেটে নিয়ে যেতে পারা এবং শিশুর পটি টয়লেটেই রাখা।“
এটি সম্ভব না হলে শিশুকে তার প্রিয় খেলনা পুতুলটি দিয়ে টয়লেট ব্যবহারের
ডেমোনেস্ট্রেশন করা যেতে পারে। যেখানে তার নিজের ও অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ
খেলার ছলেও তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, বাচ্চারা দিন দিন নিজেকে ও তার পৃথিবীকেই ডিস্কভার করছে। বড়
হবার এই নিঁপূন খেলায় সে আগে অবলোকন করে শেখাকেই প্রায়োরিটি দেয়। তাই ওকে সাহায্য
করতে হবে।
·
উপকরণঃ
শিশুকে উপযুক্ত উপকরণগুলো দিয়ে হবে। অর্থাৎ, পটি বা টয়লেট সিট। পটিগুলো
আকর্ষনীয় হলে বাচ্চারা আগ্রহী হবে বেশি। অতিরিক্ত ফিচার দরকার নেই। তবে, দেয়া যাবে
না তা নয়।
দেখে নিয়ে হবে –
ü পটির যেখানে ময়লাটা জমা হবে তার
ধারন ক্ষমতা যেন বেশি হয়। এতে করে মলমূত্র ত্যাগের পর তা বাবুর নিম্নাংগে লেগে
অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরী হবে না।
ü বাবুর জন্য যেন তা আরামদায়ক হয়।
অর্থাৎ চেপে বসতে না হয়।
ü উচ্চতা যেন এমন হয় যাতে সে নিজেই
আরাম করে বসতে পারে।
ü পা যেন মাটিকে স্পর্শ করে।
সেদিন কে বাজারে দেখলাম নাম করা ব্রান্ডের একটা পটি, যাতে বাচ্চাকে ফ্ল্যাশ
করা ও টিস্যু ব্যবহার শেখানোর অপশন আছে। ভালোই লাগল, তবে মনে হল এখন এটার বয়স নয়।
·
হাত বাড়ালেই হাতের কাছেঃ
পটি এমন স্থানে রাখতে হবে যাতে বাবু সহজেই তার একসেস পায়। প্রয়োজনে যে
রুমগুলোতে ও বেশি সময় বিচরন করে; সে রুমগুলোতে একটি করে রাখুন।
লক্ষ্যণীয় যে, বাচ্চারা পেন্টু ছাড়াই থাকতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে ওকে জোড় করে
নয় বুঝিয়ে প্যান্ট পড়াতে হবে। কিছুটা সময় ওকে স্বাধীনতা ভোগ করতেও দিতে হবে। ওর
স্বাধীনতায় আপনার দেয়া এই ছাড় কিন্তু ওর অভ্যেস খারাপ করবেনা, বরং ট্রেনিং এর এই
সময়টাতে ওর আর আপনার উভয়ের জন্যই হেল্প হবে বলে মনে করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
·
ফূর্তিঃ
বাচ্চাদের কোন কিছু শেখাতে হলে তাতে থাকতে হবে আনন্দ। শুধু ওর জন্য আনন্দদায়ক
না, আপনার জন্যও। বাবু পটিতে বসতে না চাইলে একটা মজার খেলা খেলতে পারেন। আগে থেকেই
এক ফোটা জল রং ঢেলে রাখুন পটিতে। পটি ব্যবহার করলে রং গুলিয়ে গেলেই বাবুর চোখে
বিস্ফোরণ ইস এ মাস্ট। এই পন্থা কয়েক কালারে, কয়েকবার অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
·
পছন্দ কে গুরুত্ব দেয়াঃ
বাচ্চারা পছন্দের গুরুত্ব পেতে পছন্দ করে আপনার আমার মতই। ওদের জন্য তার
ইম্প্যাক্ট ঢের বেশি। ওকে কিছু আরামদায়ক প্যান্ট কিনে দিন যা সহজেই সে নিজেই খুলতে
ও পরতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধু প্রিয় কার্টুন, ডিজাইন বা কালারটা পছন্দ ওকে করতে
দিন।
·
নির্দিষ্ট বিরতীঃ
পটি হ্যাবিট গরে তুলতে ওকে নির্দিষ্ট বিরতীতে পটিতে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে
ওকে জিজ্ঞেস করা যাবেনা যে সে পটিতে বসবে কিনা। কারণ ‘না’ বলাটা ওদের সহজাত
স্মার্টনেস।
বিরতী বা নিয়ম যাই বলুন না কেন, এর মাঝে থেকেও বাবু এক্সিডেন্ট করবেনা তা নয়।
এক্ষেত্রে বাবুর একসিডেন্ট বা যেখানে সেখানে যথেচ্ছাচার কে ‘ঠিক আছে, কোন সমস্যা
নেই বলে এনকারেজ করা যাবেনা’। আবার বকুনি দিয়ে দমিয়ে দেয়া যাবেনা। বরং আপনি একটু
মন খারাপ করে বলুন- “এর পরের বার পটিতে, ঠিক আছে?”
জানিয়ে রাখি- এক একতা বকুনি হল- এক এক মাস বেশি প্রশিক্ষণের ধকল। ঠেলা কিন্তু
সামলাতে হবে আপনাকেই।
নির্দিষ্ট বিরতীতে অভ্যস্ত করতে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া একটা মজার কৌশল হতে
পারে। এক ঘন্টার জন্য ওকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন ডায়াপার বা ন্যাপি ছাড়া, মানে
শুধু পেন্টু সমেত। তবে ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাইরে যাবার আগে টয়লেটে যাবার প্রাকটিস
গরে দিতে হবে আপনাকেই।
·
বিজয় উদ্যাপনঃ
বাবুর পটির ব্যবহার কে উৎসাহ দেবার জন্য ওর প্রত্যেক্টি সফল প্রয়াশে বিজয় উদ্যাপন
করতে পারাটা জরুরী। তবে, এটাকে এমন পর্যায়েও নিয়ে যাওয়া যাবে না যাতে সে বেশি
পরিমাণ সেলফ কনশাস হইয়ে পরে।
একএকটি সফলতায় হিপ হিপ হুররে বলে দু জন মিলে হাত পা ছুড়ুন। কলাপে চুপু দিন।
স্টিকার রাখুন সাথে। এক একটা স্টিকার হতে পারে ওর সফলতার মেডেল। কখনো বা ক্যান্ডি!
·
চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াঃ
বাবুর বিফলতায় হতাশ না হইয়ে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যেতে হবে। তবে একটু গ্যাপ দিয়ে।
দু সপ্তাহ বিরতী নিন নিজেও আর দুরন্ত এটম বোমকেও।
·
হাতের মুঠোয়ঃ
হাতের কাছেই আছে এখন মডেম, স্মার্ট ফোন, আই প্যাড বা ট্যাব। বাচ্চারাতো এখন
এমনিতেই টেকনোলজিতে এক ধাপ এগিয়ে। হাতিয়ার হোক সেটাই। এখন ইউ. টিউবে পাবেন পটি
প্রশিক্ষনের নানার ভিডিও। আপনার নিজের জন্য তো পাবেনই; সাথে ওদের জন্য বিশেষ ভাবে
তৈরী করা এনিমেটেড বা কার্টুন ক্যারেক্টাররাও প্রস্তুত আছে। নেচে গেয়ে শিখিয়ে দেবে
বেসিকগুলো। বাচ্চারাও পাবে আনন্দ। ওদের জন্য সার্চ দিতে পারেন এই ভিডিও গুলো-
ü Uh, Oh! Gotta go!
ü Once upon a potty
বাচ্চাদের শেখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করা চারটে খানি ব্যাপার নয়। আদর মাখা টসটসে গাল
দিয়ে এখনও টুপ টুপ করে আহ্লাদে লালা পরে, কিন্তু পাঁকা পাঁকা কথা সব তাদের রপ্ত!
একেবারে নিদারুন কৌশলে! তাতে কি- যদি ‘ক’-এর যাগায় ‘ত’ বলছে!? ভারিক্কি কি তাতে
কমে? ভারিক্কির ভারে, মানে একটু বেশি বুঝবার প্রতিযোগীতায় আমিতো রীতিমত ভ্যাবলাকান্ত!
তবুও চেষ্ঠাতো করতেই হবে। যখন চেষ্ঠা করি তখন ভাবি- আমার মা, নানী আর খালা কতই না
ধৈর্য ছিলেন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন যাতে বড়দের কাছ থেকে যা পেয়েছি তা
ছোটদের মাঝে প্রবাহিত করতে পারি।
No comments:
Post a Comment