Wednesday, 6 November 2013

পটি ট্রেনিং



পটি ট্রেনিং যে মায়েদের জন্য কি পরিমাণ শরীর থেকে লবণ নিংরানো কাজ হতে পারে; আগে কল্পনাই করতে পারিনি। যখন হাত কলমে (আদতে ‘পটি’ নিয়ে) কন্যার সাথে মুখোমুখি অবতীর্ণ হলাম; কন্যা আমার একেবারে ঝাসি কি রাণীর মত যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল। মানে, সরাসরি অনড় অবস্থান!
এস-ইউশুয়াল শুরু করতে হল- বিস্তর পড়ালেখা !

পটি ট্রেনিং এর আদর্শ সময় হল- ১৮ মাস থেকে ৪ বছর। অবশ্য আমাদের দেশে বাচ্চারা আরেকটু আগে শেখে; যেহেতু ডায়াপার কালচার অত বেশি জনপ্রিয় এখনো হয়নি। তাই বলে একেবারেই যে নেই; তাও বলা ঠিক হবেনা।

পটি ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে এমন কোন বাধাঁ ধরা নিয়ম নেই যেটি পারফেক্ট বলে স্বীকৃত। তবে আমাদের যুগ যুগের মা-খালাদের শিশু পালন শিল্প এবং শিশু বিশেষজ্ঞদের প্রচেষ্টার গুণে; শিশুদের সুবাশ মাখা প্রতিটি গৃহেই কিন্তু কিছু যাদু মন্ত্র আঁনাচে-কাঁনাচে ছড়িয়ে আছে। খুঁজে শুধু নিতে হবে সোনার কাঁঠি আর রূপোর কাঠির মাঝে কোনটি ভাংবে ঘুম!

প্রকেসর আজ্রিন ও রিচার্ড এম. ফক্স তাদের যৌথ প্রয়াশ- ‘টয়লেট ট্রেনিং ইন লেস দেন এ ডে’ (১৯৭৪) এ এরকমই বেশ কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস এর অবতারণ ঘটিয়েছেন। আবার উন্নত দেশগুলোতে বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যারা মা বা শিশুর দেখাশুনায় নিযুক্ত যিনি তাদের তিন দিনের কোর্স করিয়ে থাকে। যদিও তিন দিন বলা হচ্ছে; তবে ঐ তিন দিনের জন্য বেশ কিছু দিন আগে থেকেই গ্রাউন্ড ক্রিয়েট করে নিতে হয়; যা প্রায় তিন মাসের মত একটা যাত্রা। তিন দিন হল- শিওর শট। মানে; এই তিন দিনের কর্মকান্ড পটি ট্রেনিং কে এক্টীভেট করবে চিরস্থায়ীভাবে। তবে, এক্ষেত্রেও যে ১০০% সাফল্য আসবে তা বলা কঠিন। সেক্ষেত্রে, আবারো বিরতী দিয়ে নতুন করে প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

শিশু প্রস্তুত কিনা? ঃ
পটি ট্রেনিং শুরুর আগে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল করে নিতে হবে। মূলত, এই দেখে নেওয়ার মানে হচ্ছে শিশু আসলেও এই মূহুর্তে পটি ট্রেনিং-এর জন্য প্রস্তুত কিনা খেয়াল করা। চেকলিস্টটি এরকম-

v  শারীরিক সংকেত-
·         কনফিডেন্টলি হাটতে এবং দৌঁড়তে পারে কিনা।
·         প্রস্রাব করবার সময় পর্যাপ্ত পরিমানে করছে কিনা, নাকি অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর করছে।
·         নির্দিষ্ট বা তার আশেপাশের সময়ে মলত্যাগ করছে কিনা।
·         দিন বা রাতে ঘুমালে অন্তত দু’ঘন্টা শুকনো অবস্থায় থাকছে কিনা। এটা মূলত যাচাই করা যে ওর ব্লাডার এর মাস্‌লগুলো পূর্ণভাবে ডেভেলপ বা শক্তিশালী হয়েছে কিনা।

v  আচরণগত সংকেত-
·         বেশ কিছু সময় (৫ মিনিট নিদেনপক্ষে) কোন কিছু নিয়ে নিবিষ্ঠ মনে বসে থাকতে পারা।
·         নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে বা পড়তে পারা।
·         ভেজা অবস্থায় থাকলে অস্বস্তিতে ভোগা।
·         পায়খানার বেগ পেলে তা বলে বা ইংগিত দিয়ে প্রকাশ করতে পারা।
·         স্বাবলম্বী আচরণ প্রকাশ করা।
·         কোন কিছু করতে পারার (সাফল্য) পর; তার জন্য গর্ববোধ করা।
·         টয়লেট বা পটি ব্যবহার শিখবার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ না দেখানো।
·         সহযোগীতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করা।

v  জ্ঞানীয় বা কগনিটিভ সংকেত-
·         প্রস্রাব বা পায়খানার বেগ পেলে তার শারীরিক তাড়না বুঝতে পারা। এক্ষেত্রে পটিতে গিয়ে বসতে হবে বা মা-বাবা/ যার কাছে থাকছে তাকে বলবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করা (সাহাযু নেবার জন্য)।
·          সাধারণ নির্দেশগুলো পালন করতে পারা।
·         যেখাঙ্কার জিনিস সেখানে রাখার বিষয়টি বুঝতে ও রাখতে পারা।
·         ‘পায়খানা’ বা ‘প্রস্রাব’ কে বোঝানোর মত শব্দগুলো রপ্ত করা।

সাধারণত মেয়ে শিশুরা ছেলে শিশুদের আগে পটিতে অভ্যস্ত হয়। তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই নিমোক্ত বিষয়গুলো কিছুটা সময় বেশি নিয়ে নিতে পারে। যেমন-
·         নতুন ভাই বা বোন (সিবলিং) আসন্ন বা এসে থাকলে।
·         প্রি-স্কুলে / ডে-কেয়ারে থেকে থাকলে।
মনে রাখতে হবে- এটা একটু বিলম্বই কেবল। এবং এর থেকে শিশু বের হইয়ে আসবে। সময় দিতে হবে। কারণ; প্রতিটা শিশুই আলাদা এক একটি সত্ত্বা।

করণীয়ঃ
বাচ্চাদের পটি ট্রেনিং দেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী উপায় হল তাদের ডায়াপার, ট্রেনিং প্যান্ট বা ন্যাপি থেকে দূরে রাখা। এমনটাই কিন্তু বলেন আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞরা। আমাদের মা-খালারাও কিন্তু এর কড়া সাপোর্টার। শুধু মাত্র ঘুমের সময় সেগুলো ব্যবহার ইস ওকে । তবে, বাবু জেগে থাকা অবস্থায় নিজেকে কিছুটা মানিয়ে নিতে পারলে সে ক্ষেত্রে ঘুমের সময়ও ডায়াপার বা ন্যাপি প্রয়োজন্টা ধিরে ধিরে কমিয়ে আনতে হবে। সেগুলো পরের কথা। আগে বেসিকগুলো দেখে নেই-

·         দেখে শেখাঃ
বাচ্চাদের শিখাবার ক্ষেত্রে এটা একতা উপযুক্ত মাধ্যম। বাচ্চারা দেখে বা অনুকরণ করে শেখে।  এ প্রসংগে সান ফ্রান্সিস্কোর একটি প্রি-স্কুলের শিক্ষক ও শিশু বিষেশজ্ঞ ফেলম বলেন, “সবচেয়ে ভালো পন্থা হল শিশুকে বাবা বা মায়ের সাথে টয়লেটে নিয়ে যেতে পারা এবং শিশুর পটি টয়লেটেই রাখা।“

এটি সম্ভব না হলে শিশুকে তার প্রিয় খেলনা পুতুলটি দিয়ে টয়লেট ব্যবহারের ডেমোনেস্ট্রেশন করা যেতে পারে। যেখানে তার নিজের ও অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ খেলার ছলেও তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, বাচ্চারা দিন দিন নিজেকে ও তার পৃথিবীকেই ডিস্কভার করছে। বড় হবার এই নিঁপূন খেলায় সে আগে অবলোকন করে শেখাকেই প্রায়োরিটি দেয়। তাই ওকে সাহায্য করতে হবে।

·         উপকরণঃ
শিশুকে উপযুক্ত উপকরণগুলো দিয়ে হবে। অর্থাৎ, পটি বা টয়লেট সিট। পটিগুলো আকর্ষনীয় হলে বাচ্চারা আগ্রহী হবে বেশি। অতিরিক্ত ফিচার দরকার নেই। তবে, দেয়া যাবে না তা নয়।
বাজারে এখন নানা রকম বাহারী পটি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বাবুর জন্য পটি কেনার ক্ষেত্রে
দেখে নিয়ে হবে –
ü  পটির যেখানে ময়লাটা জমা হবে তার ধারন ক্ষমতা যেন বেশি হয়। এতে করে মলমূত্র ত্যাগের পর তা বাবুর নিম্নাংগে লেগে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরী হবে না।
ü  বাবুর জন্য যেন তা আরামদায়ক হয়। অর্থাৎ চেপে বসতে না হয়।
ü  উচ্চতা যেন এমন হয় যাতে সে নিজেই আরাম করে বসতে পারে।
ü  পা যেন মাটিকে স্পর্শ করে।
সেদিন কে বাজারে দেখলাম নাম করা ব্রান্ডের একটা পটি, যাতে বাচ্চাকে ফ্ল্যাশ করা ও টিস্যু ব্যবহার শেখানোর অপশন আছে। ভালোই লাগল, তবে মনে হল এখন এটার বয়স নয়।

·         হাত বাড়ালেই হাতের কাছেঃ
পটি এমন স্থানে রাখতে হবে যাতে বাবু সহজেই তার একসেস পায়। প্রয়োজনে যে রুমগুলোতে ও বেশি সময় বিচরন করে; সে রুমগুলোতে একটি করে রাখুন।

লক্ষ্যণীয় যে, বাচ্চারা পেন্টু ছাড়াই থাকতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে ওকে জোড় করে নয় বুঝিয়ে প্যান্ট পড়াতে হবে। কিছুটা সময় ওকে স্বাধীনতা ভোগ করতেও দিতে হবে। ওর স্বাধীনতায় আপনার দেয়া এই ছাড় কিন্তু ওর অভ্যেস খারাপ করবেনা, বরং ট্রেনিং এর এই সময়টাতে ওর আর আপনার উভয়ের জন্যই হেল্প হবে বলে মনে করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।

·         ফূর্তিঃ
বাচ্চাদের কোন কিছু শেখাতে হলে তাতে থাকতে হবে আনন্দ। শুধু ওর জন্য আনন্দদায়ক না, আপনার জন্যও। বাবু পটিতে বসতে না চাইলে একটা মজার খেলা খেলতে পারেন। আগে থেকেই এক ফোটা জল রং ঢেলে রাখুন পটিতে। পটি ব্যবহার করলে রং গুলিয়ে গেলেই বাবুর চোখে বিস্ফোরণ ইস এ মাস্ট। এই পন্থা কয়েক কালারে, কয়েকবার অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

·         পছন্দ কে গুরুত্ব দেয়াঃ
বাচ্চারা পছন্দের গুরুত্ব পেতে পছন্দ করে আপনার আমার মতই। ওদের জন্য তার ইম্প্যাক্ট ঢের বেশি। ওকে কিছু আরামদায়ক প্যান্ট কিনে দিন যা সহজেই সে নিজেই খুলতে ও পরতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধু প্রিয় কার্টুন, ডিজাইন বা কালারটা পছন্দ ওকে করতে দিন।

·         নির্দিষ্ট বিরতীঃ
পটি হ্যাবিট গরে তুলতে ওকে নির্দিষ্ট বিরতীতে পটিতে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ওকে জিজ্ঞেস করা যাবেনা যে সে পটিতে বসবে কিনা। কারণ ‘না’ বলাটা ওদের সহজাত স্মার্টনেস।
বিরতী বা নিয়ম যাই বলুন না কেন, এর মাঝে থেকেও বাবু এক্সিডেন্ট করবেনা তা নয়। এক্ষেত্রে বাবুর একসিডেন্ট বা যেখানে সেখানে যথেচ্ছাচার কে ‘ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই বলে এনকারেজ করা যাবেনা’। আবার বকুনি দিয়ে দমিয়ে দেয়া যাবেনা। বরং আপনি একটু মন খারাপ করে বলুন- “এর পরের বার পটিতে, ঠিক আছে?”
জানিয়ে রাখি- এক একতা বকুনি হল- এক এক মাস বেশি প্রশিক্ষণের ধকল। ঠেলা কিন্তু সামলাতে হবে আপনাকেই।

নির্দিষ্ট বিরতীতে অভ্যস্ত করতে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া একটা মজার কৌশল হতে পারে। এক ঘন্টার জন্য ওকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন ডায়াপার বা ন্যাপি ছাড়া, মানে শুধু পেন্টু সমেত। তবে ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাইরে যাবার আগে টয়লেটে যাবার প্রাকটিস গরে দিতে হবে আপনাকেই।


·         বিজয় উদ্‌যাপনঃ
বাবুর পটির ব্যবহার কে উৎসাহ দেবার জন্য ওর প্রত্যেক্টি সফল প্রয়াশে বিজয় উদ্‌যাপন করতে পারাটা জরুরী। তবে, এটাকে এমন পর্যায়েও নিয়ে যাওয়া যাবে না যাতে সে বেশি পরিমাণ সেলফ কনশাস হইয়ে পরে।
একএকটি সফলতায় হিপ হিপ হুররে বলে দু জন মিলে হাত পা ছুড়ুন। কলাপে চুপু দিন। স্টিকার রাখুন সাথে। এক একটা স্টিকার হতে পারে ওর সফলতার মেডেল। কখনো বা ক্যান্ডি!

·         চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াঃ
বাবুর বিফলতায় হতাশ না হইয়ে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যেতে হবে। তবে একটু গ্যাপ দিয়ে। দু সপ্তাহ বিরতী নিন নিজেও আর দুরন্ত এটম বোমকেও।

·         হাতের মুঠোয়ঃ
হাতের কাছেই আছে এখন মডেম, স্মার্ট ফোন, আই প্যাড বা ট্যাব। বাচ্চারাতো এখন এমনিতেই টেকনোলজিতে এক ধাপ এগিয়ে। হাতিয়ার হোক সেটাই। এখন ইউ. টিউবে পাবেন পটি প্রশিক্ষনের নানার ভিডিও। আপনার নিজের জন্য তো পাবেনই; সাথে ওদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরী করা এনিমেটেড বা কার্টুন ক্যারেক্টাররাও প্রস্তুত আছে। নেচে গেয়ে শিখিয়ে দেবে বেসিকগুলো। বাচ্চারাও পাবে আনন্দ। ওদের জন্য সার্চ দিতে পারেন এই ভিডিও গুলো-
ü  Uh, Oh! Gotta go!
ü  Once upon a potty






বাচ্চাদের শেখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করা চারটে খানি ব্যাপার নয়। আদর মাখা টসটসে গাল দিয়ে এখনও টুপ টুপ করে আহ্লাদে লালা পরে, কিন্তু পাঁকা পাঁকা কথা সব তাদের রপ্ত! একেবারে নিদারুন কৌশলে! তাতে কি- যদি ‘ক’-এর যাগায় ‘ত’ বলছে!? ভারিক্কি কি তাতে কমে? ভারিক্কির ভারে, মানে একটু বেশি বুঝবার প্রতিযোগীতায় আমিতো রীতিমত ভ্যাবলাকান্ত! তবুও চেষ্ঠাতো করতেই হবে। যখন চেষ্ঠা করি তখন ভাবি- আমার মা, নানী আর খালা কতই না ধৈর্য ছিলেন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন যাতে বড়দের কাছ থেকে যা পেয়েছি তা ছোটদের মাঝে প্রবাহিত করতে পারি। 

Monday, 7 October 2013

মেটারনিটি লিভের পর অফিস ফেরার প্রস্তুতি





অলস দুপুরে নিরলস খাটা মানুষ আপনি। বুদ্ধিদীপ্ত, কর্মচঞ্চল! টিম কে লীড করছেন, মিটিং, ব্রিফিং মিলে নয়টা – পাচঁটার টগবগ জীবন। ক্যারিয়ারটা খুব গোছানো; আপনার গোছানো সংসারের মতই। কোথাও কোন কম্প্রোমাইসের লেশ মাত্র নেই। এরই মাঝে জীবনে পরিবর্তন। সময়, স্বামী-স্ত্রীর কেমিস্ট্রি, পরিবারের প্রেশার কিংবা সারপ্রাইস গিফট- এই মাল্টিপাল অপশনের যেকোনো একটিতে গোল্লা ভরাট করে আপনি সন্তান সম্ভবা। তাতেও কোন খামতি বা কমতি নেই আপনার- অফিসের প্রতি ডেডিকেশনে। তাছাড়া আপনার টিমও আপনাকে যথেষ্ট স্পেস দিচ্ছে- তা সহানুভূতি বা দূর্বল ভেবে নয়; এবং আপনি তা ননও।
প্রেগনেন্সির নয়টা মাস যেন নয় যুগ! ডিউ ডেট এর ক্যালেন্ডার-এ ক্রস মার্ক ফেলতে ফেলতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও দিন এগোচ্ছেনা বলেই ঠেকে। কিছুটা শারীরিক অস্বস্তি কিংবা অনাগত সন্তানকে নিয়ে আবেগের উথাল পাতাল যা- ইহোক না কেন দিন না কাটার এই দিনগুলো সত্যিই অসাধারণ। দূঃখজনক হলেও সত্য যে আপনার পেটের পটে আঁকা শিশুটি, আপনার কোলে যেদিন থেকেই তার শরীরের ওম ছড়িয়ে দেবে, সেদিন থেকেই দিনগুলো লাগাম ছাড়া! ম্যাটারনিটি লিভ! হায়রে আমার ম্যাটারনিটি লিভ!

বুদ্ধিদীপ্ত, কর্মচঞ্চল, ডেয়ারিং ওয়ার্কিং ওমেন, যে এইতো ছ’মাস আগেও দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন অফিস- আজ মনে হচ্ছে সব কেন যেন অনিশ্চিত। বাবুর কেয়ার, অফিসের ডেস্ক – সব! সব নিয়েই হিম-সিম খাচ্ছেন। ওয়েট ইন দেয়ার গর্জিয়াস! আপনার জন্য কিছু আছে বলার- যা আমি অন্যদের উপদেশ থেকে পেয়েছি কিংবা  হোচোট খেয়ে শিখেছি আর ভেবেছি- যদি কেঊ বলবার থাকত!
কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য আপনার যেমন রয়েছে  শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির ব্যপার, তেমনি রয়েছে ছোট্ট শিশুটার-ও। ওকেও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে বলেই আপনাকে শক্ত, দৃর ও ধৈর্যশীল হতে হবে। এই সময়টা আর অফিস পাড়ায় ফেরার প্রথম কইয়েকটা দিন খুব বেশি ক্রুশিয়াল।

1.       অফিসের সময়ের সাথে সাথে গুছিয়ে নিন রুটিন
ধরুন আপনার অফিস টাইমিং ৯-৫ টা। হাতে গোনা কিছু দিন আগে থেকেই এই টাইমিংটা প্রাকটিসে আনুন। সকাল সকাল ঘুম থেকে ঊঠে নিজেকে ও বাবুর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অর্গানাইজ করুন যাতে এমন ঠেকে যে একটু পরই আপনি ছুট দিবেন অফিসে। এটা প্রয়োজন- যাতে অফিসের দিনগুলোতে আপনার খুব বেশি এডজাস্ট এর প্রয়োজন না হয়; ওসময় এডজাস্ট করার  থাকবে বহু কিছু।


2.       গোটা-কদিন আগেই জয়েন করুন; ছন্দ আনতে
একে বারে কাগজ-এ কলমে জয়েন না করলেও হাতে ক’দিন রেখেই জয়েন করুন। এত দিনের লম্বা গ্যাপে আপনি যাতে নিজেকে একেবারেই বেসামাল না মনে করেন তার জন্যই রিল্যাকস্‌ড ওয়েতে অফিস করুন। বুঝে নিন আপনার দাবড়ানি-চাপরানি খাওয়া ডেস্ক আর ডেস্কটপটা।

3.       বাবুর ফিডীং হ্যাবিট
বাবুর জন্যও হুট করে আপনাকে ছেড়ে থাকাটা বেশ কঠিন। বিশেষ করে ওর ফিডিং রুটিনের ক্ষেত্রে। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং এ অভ্যস্ত হলে ওকে আস্তে ধিরে ফিডিং বোতল বা চামচে পাম্প করা দুধ অথবা ফরমুলা খাওয়ানোর অভ্যস করা উচিত। রিসার্চ বলে যে সাধারণত দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে এই হাবিট না গড়তে না পারলে পরবর্তীতে বেশ বেগ পেতে হয় মায়েদের। তাই যারা কাজে ফিরবেনই, তাদের আগে থেকেই বাবুকে বোতল বা চামচে খাওয়নোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া ছ’মাস থেকেই যেহেতু বাবু বাড়তি খাওয়া শুরু করে থাকে; তাই গোটা দশেক দিন আগে থেকেই কিছু কিছু (পিউরী করা ভাত বা সুজি) খাবার ইনট্রুডিউস করা মন্দ নয়।

4.       বাবুর ডে-লং কেয়ার
বাবুকে কার কাছে রাখবেন কাজে ফিরবার পর তা নিশ্চিত এত দিনে ঠিক ঠাক। তাই অফিস রুটিনের সাথে তাল মিলিয়ে বাবুকে তার কাছে অভ্যস্ত করুন। আপনি পাশে থেকেও একটু দূরে থাকুন। এতে বাবুর অভ্যস্ততার সাথে সাথে আপনি বাবুর দেখভালে নিযুক্ত যিনি থাকছেন (নিকট আত্মিয়ই হোক কিংবা পেইড লেবার) তারও শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি গড়ে উঠছে, একই সাথে বাবুর সাথে তার কেমিস্ট্রি। সেই সাথে আপনার আস্থা আর মানসিক স্থিরতাও অনেকটাই একটা শেপ-এ চলে আসবে।

5.       নিজেকে প্রস্তুত করুন
ক্যরিয়ারিস্ট বলেই যে আপনি শিশু ও সংসারের প্রতি অবহেলা বা অন্যায় করছেন তা নয়। আপনি যা করছেন সবই পরিবারের জন্য। এটা সত্য, কাজে ফিরবার আগের কটা দিন ও ফিরবার পরের কতগুলো দিন খুব টাফ। এসময়েই অনেকে ভুল কিছু ডিসিশন নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এবং অতঃপর টানেন জীবনভর মন ভারের বোঝা। যা হোক। এখন কিন্তু টিনেজ টাইম নয় যে বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাগ করে চুল কেটে ফেললাম। ধৈর্যের পরীক্ষায় আপনাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আপনার সহকর্মী, আপনার বস কে বুঝিয়ে বলুন- তারা আপনাকে স্পেস দেবে। তবে সবচেয়ে বড় সাপোর্টটা নিজেকে নিজের দিতে হবে; আর যার কথা না বললেই নয়- আপনার জীবনসংগী। 

(চলবে)

নতুন অতিথির জন্য



বাড়িতে এসেছে নতুন অতিথি। গুট গুট করে তাকায়, আবার ঘুমিয়ে পরে। কখন আবার ভাঙ্গবে ঘুম? বাবুটাকে বাড়ি আনবার পর পরই শুরু হয় টেনশন- কি কি লাগবে ওর যত্ন আত্তিতে? আবার বাবুটা যদি হয় নিকটজনের/ আত্মিয় বা বন্ধুবান্ধবের তাহলেও টেনশন- ছোট বাবুটাকে দেখতে যাওয়ার সময়ক্ষণ একদম ঠিক ঠাক। ব্যস ! শুধু হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা কি দিয়ে সাজাই উপহারের ডালি। হুম, বাবুটাকে তো আর খালি হাত এ দেখতে যাওয়া যায় না। আবার কি নিলে কাজে লাগবে, কোনটা আবার আর দশটা উপহারের মত অপ্রয়োজনীয় ঠেকে- ঠাহর করা যাচ্ছে না, তাইতো? আবার কেউ বা ভাবছেন- যাওয়ার সময় একটা বেবি গিফট সেট নিয়ে যাব বাজেটের মধ্যে। সত্যি বলছি এই রকম দায় এড়ানো উপহারগুলো কাজেই লাগেনা। শুধু শুধু বাড়ির কিছু জায়গা জুড়ে পরে থাকে। উপহার কি না- তাই পরিত্রাণ পাওয়া যায়না কাউকে হস্তান্তর করে। পরে উপযোগের সাম্ভাব্য সময় গড়িয়ে গেলেই আস্তাকূড়ে চলে যায়।

নিজের বা পরিবারের জন্য কিছু কিনবার সময় আমরা খুদি খুদি অক্ষরগুলোতে চোখ বুলোতে ভুলিনা, জিনিসটা ভালো তো? অথবা ঠিকই নেড়েচেড়ে উলটে পালটে দেখে নেই মেয়াদ কত দিনের? তাহলে অন্যবাড়ির ছোট্ট সোনার জন্য কেন নয়? উপহার সামগ্রীতে যাবার আগে কিছু ব্যাপার খেয়াল করে নেই-

1.       বাবুর ত্বকে লাগাবার প্রোডাক্ট হলে তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হই
2.       মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার দিন খেয়াল করে নেই
3.       কোয়ান্টিটি অপেক্ষা কোয়ালিটিতে নজর দেই
4.       উপহারটির ক্ষেত্রে বাবুর বয়স বিবেচনায় রাখি
5.       এমন কিছু বাছাই করি যা পেলে নতুন বাবুর বাবা-মায়ের কিছুটা হলেও কেনাকাটার ঝামেলা কমে
6.       দেয়ার জন্য দেয়া সুলভ মানসিকতা পরিবর্তন করে যথার্থ কাজের কিছু দেই, অযথা জামাকাপড় বা সস্তা গিফট প্যাকের দিকে না ঝুঁকি
7.       বাবুর মায়ের দিকেও লক্ষ্য করি, তার কথা ভুললে চলবেনা

এবারে নজর দেই সামগ্রীগুলোর দিকেঃ
নিজের বাবুর জন্যই হোক কিংবা পরিচিতজনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর লিস্ট করতে গেলে দেখবেন- ক্ষুদে এই মানুষটার ফর্দ আপনার চেয়েও বেশি। এইজন্যই বলছিলাম এমন কিছু বাছাই করুন যা পেলে নতুন বাবুর বাবা-মায়ের কিছুটা কেনাকাটার ঝামেলা কমে। আর যদি নিজেই বাবা-মা হন তাহলে তো কিনতেই হবে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রায়োরিটি ফ্যাক্টর বিবেচ্য-


ক্লিনিং এন্ড হাইজিন প্রোডাক্টসঃ

1.       অয়েল ক্লথ (ঘরের জন্য)
2.       অয়েল ক্লথ (ট্রাভেল এর জন্য)
3.       ডিস্পোসেবল ডায়াপার (দিনের জন্যঃ এটা সাধারণত চার ঘন্টা বাদে বাদে পরিবর্তন করতে হয়)
4.       (ঐ) (আলট্রা- এটা রাতের জন্য, সাধারণত ১২ ঘন্টা সাপোর্ট দেয়)
5.       প্লাস্টিক প্যান্ট
6.       কাথাঁ
7.       কাপড়ের ন্যাপি বা নিমা
8.       বিপ
9.       ছোট নরম রুমাল সেট
10.    ভ্যাসলিন (পারফিউম ছাড়া- ডায়াপার এরিয়ার জন্য)
11.    লিকুইড এন্টিসেপ্টিক (কাপড় ধোয়া ও ঘর মোছার জন্য)
12.    লিকুইড হ্যান্ড স্যানিটাইসার
13.    কটন বাড (থিন- নাক ও নাভি পরিষ্কারের জন্য)
14.    ওয়েট ওয়াইপস
15.    নেইল কাটার (বাচ্চাএর জন্য আলাদা পাওয়া যায়)
16.    নরম তোয়ালে (গোসলের জন্য)
17.    বাথ টাব (এখন একদম প্রথম বারের মত যারা মা হয়েছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি- বাজারে এসেছে ইনক্লাইন বাথ সেট। হেলান কেদারার মত দেখতে নেতের এই গোসলের অনুষংটি বাথ টাব বা গামলায় সহজেই এটে যায়। বাবু হাত থেকে  ফসকানোর ভয় নেই। স্যার বা ম্যাডামকে ওতে শুইয়ে রেখে দুহাত দিয়ে আরাম করে জলকেলি সেরে নিন সোনামনির। কিডস এন্ড মমস এ খোজ নিতে পারেন)

কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজঃ

1.       পাউডার
2.       লোশন
3.       ক্রিম
4.       ওলিভ/ সানফ্লাওয়ার অয়েল
5.       বডি ম্যাসাজ অয়েল (বাথ টাইম, বেড টাইম)
6.       ভ্যাসলিন
7.       সোপ (লিকুইড হলেই ভালো)
8.       শ্যাম্পু

ঘরে- বাইরেঃ

1.       ট্রাভেল ব্যাগ (ছোট+বড়)
2.       ফিডার গরম রাখার জন্য আলাদা ফিদার কভার পাওয়া যায় যা বারির বাইরে গেলে বেশ উপকারে লাগে
3.       বাবুকে বাইরে নেবার জন্য নরম তোয়ালে বা র‍্যাপিং টাওয়েল
4.       গুড়ো দুধ/ সেরেল্যাক নেবার চেম্বার

ফীডিংঃ

1.       ফিডার (কাঁচের হলেই ভালো)
2.       ফিডার ব্রাশ
3.       ফিডার ধোয়ার জন্য লিকুইড ক্লিনার (বাবুদের জন্য নামি দামি ব্রান্ডগুলো পৃথক ক্লিনার-এর আয়োজন রাখে।)
4.       থার্মোফ্লাক্স

ইমারজেন্সিঃ

1.       থার্মোমিটার
2.       নাসাল বাল্ব
3.       ডাক্তার প্রস্তাবিত কিছু মেডিসিন (ন্যাসাল ড্রপ, শিশুদের ভ্যাপোরাব)

বেডিংঃ

1.       মশারী
2.       মাথার বালিশ (দুটো হলে ভালো এবং বেশ কয়েক সেট কভার। বাচ্চাদের মাথা খুব ঘামে)
3.       কোল বালিশ
4.       কম্বল (ছোট কম্বল আলাদাই পাওয়া যায় ওদের জন্য)
5.       গায়ে দেবার কাঁথা (বানিয়ে নিলেই ভালো, কিনতেও পাবেন বাহারী কাঁথা)

অর্গানাইজারঃ

6.       প্লাস্টিক ড্রয়ার ইউনিট (আমি আর.এফ.এল এর চার তাকের-টা ব্যবহার করছি)
7.       ঝুড়ি (ফিডার ধোবার পর পানি শুকাবার জন্য)
8.       কাপড় শুকাবার ক্লিপ সেট (একসাথে অনেকগুল ছোট কাপড় অল্প জায়গায় শেটে যায়)
9.       বাবুর ডায়াপার ও ময়লা ফেলবার জন্য কভার সহ বিন
10.    বাবুর ময়লা কাপড় রাখার ঝুড়ি
  
আরো কিছুঃ

1.       হাত-পা মোজা (হাত মোজাটা জরুরী, নয়তো খামচি এন্ড আচড় ইস এ মাস্ট)
2.       চিরুনী সেট (এতে ছোট্ট বাবুদের হেয়ার ব্রাশ-ও থাকে)
3.       হট ওয়াটার ব্যাগ (এটা বাবুর মায়ের জন্য)
4.       ফিডিং পিলো (এটাও বাবুর মায়ের জন্য। বাজারে না পেলে বানিয়ে নিতে পারেন কিডনি শেপের একটু উচু বালিশ)



(আরো কিছু মনে পরা মাত্রই আপডেট হবে)